গ্রীক মিথলজি ৬ (আবার যুদ্ধ- জায়ান্ট এবং টাইফোয়িয়াস)

মায়ের মন বড়ই অদ্ভুত, সে মা যদি গায়া হয়। টাইটান যুদ্ধে জিউস জয়ী হবার পর ক্রোনাসসহ অন্যান্য টাইটানদের টারটারাসে বিভিন্ন রকম শাস্তি দেন। গায়া চেয়েছিলেন তাঁর সন্তান সাইক্লোপস এবং হেকাটনখিরাসদের মুক্তি, তাই জিউসকে ক্রোনাসের বিরুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু তিনি চাননি জিউস আবার টাইটানদের শাস্তি দিক! কারণ টাইটানরাও তো গায়ার সন্তান! তাই টাইটানদের শাস্তিতে ক্ষুদ্ধ গায়া তাঁর আরেক প্রজাতির সন্তান জায়ান্টদের আহবান করলেন। যীশুর জন্মের প্রায় চল্লিশ বছর আগে ওভিদ নামে এক রোমান কবি ছিলেন, তিনি লিখেছেন, গায়া তাঁর জায়ান্ট সন্তানদের আহবান করেছিলেন , “দেবতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করো”।

জায়ান্টদের কথা মনে আছে? সেই যে ক্রোনাস যখন ইউরেনাসকে অনমনীয় কাস্তে দিয়ে নপুংসক করছিলেন, তখন ইউরেনাসের যে রক্ত ঝরেছিলো, সেগুলো গায়া রেখে দেন। কিছু রক্ত গায়া রেখে দিয়েছিলেন পাল্লেনে নামের জায়গায়, পরের মৌসুমে সেই রক্ত থেকেই জন্ম নিয়েছিলো জায়ান্টরা। এরা শুধু দেখতেই বিশাল ছিলো না, এদের ছিলো শত হাত এবং সাপের মতো পা। বিশাল লম্বা চুল মাথা এবং চিবুক থেকে নিচের দিকে ঝুঁকে থাকতো। এরা ছিলো লম্বায় ষোল ফুটের মতো। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, এদের পা সাপের মতো ছিলো না, ছিলো স্বাভাবিক।

জিউস টাইটান যুদ্ধে জয়ের পর দেবতাদের মধ্যে শৃংখলা, সম্মান, নিষ্ঠা, শ্রদ্ধা, মহত্ত্ব, শ্লীলতা এবং ভয় – সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। তখনো জিউস এসবের কোনো কিছুই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। এই সুযোগে এবং গায়ার প্ররোচনায় জায়ান্টরা অলিম্পিয়ানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ততদিনে অবশ্য সময় অনেক দূর গড়িয়ে গেছে, পৃথিবীতে তখন মানবজাতির বসতি, হারকিউলিসও তখন জীবিত!

পিন্ডার নামে এক বিখ্যাত মিথ লেখকের মতে, সূর্য দেবতা হেলিয়সের গবাদি পশু চুরির মাধ্যমে এই যুদ্ধের সূচনা হয়। আবার অন্য এক মিথে আছে, জায়ান্টদের অন্যতম নেতা ইউরাইমেডন (বা পরফাইরিয়ন) জিউসের স্ত্রী হেরার শ্লীলতাহানি করলে জায়ান্টদের সাথে অলিম্পিয়ানদের যুদ্ধ শুরু হয়।

জায়ান্ট ওটাস এবং ইপহিয়ালটেস আশা করেছিলো থেসালী, পেলিয়ন ও ওসার পাহাড়গুলোকে একটার উপরে আরেকটা জমা করে অলিম্পাস পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে পারবে। এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলো পরফাইরিয়ন এবং আলকাইয়োনিয়াস। এই যুদ্ধ এতো ভয়ংকর ছিলো যে, কথিত আছে কামার দেবতা হেফাস্টাস অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, পরে সূর্য দেবতা হেলিয়স তার রথে চড়িয়ে হেফাস্টাসকে বাঁচিয়ে স্বর্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। দেবতারা একটি ভবিষ্যতবানী জানতেন, এই যুদ্ধে জায়ান্টদের তারা পরাজিত করতে পারবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত এক মরণশীল বীর এসে তাদের সাহায্য করবেন। কেউ কেউ বলেন, এই ভবিষ্যতবানী করেছিলেন হেরা। যাহোক, গায়াও এই ভবিষ্যতবানীর কথা জানতেন। তাই তিনি একটি ভেষজ ওষুধ খুঁজছিলেন, যেটা হলে জায়ান্টরা সেই মরণশীলের আঘাতে মারা যাবে না। কিন্তু জিউস আগে থেকেই ভোরের দেবতা এওস, চন্দ্রদেবী সেলেনে এবং সূর্য দেব হেলিয়সকে উদিত হতে নিষেধ করেন এবং এই অন্ধকারের সুযোগে নিজেই সেই ভেষধ ওষুধটা কব্জা করেন। এরপর দেবী এথেনাকে বলেন হারকিউলিসের কাছে গিয়ে তাঁকে এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে।

Gigantomachy

জায়ান্টরা অলিম্পাস পাহাড় আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে (শিল্পী- বার্নার্ড পিকার্ট)

 

হারকিউলিস এথেনার অনুরোধ শুনে যুদ্ধে এসে তাঁর ভয়ঙ্কর হাইড্রার বিষ মাখানো তীর দিয়ে জায়ান্ট আলকাইয়োনিয়াসকে আঘাত করেন, কিন্তু মাটিতে পরা মাত্রই আলকাইয়োনিয়াস আবার শক্তি প্রাপ্ত হোন। তখন এথেনা জানান, আলকাইয়োনিয়াস যতক্ষন পর্যন্ত তার জন্মস্থান পাল্লেনে-তে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে অমর। হারকিউলিস তখন আলকাইয়োনিয়াসকে টেনে হেঁচড়ে পাল্লেনের বাইরে নিয়ে যান এবং মৃত্য না হওয়া পর্যন্ত প্রহার করতে থাকেন। হারকিউলিস শুধু আলকাইয়োনিয়াসকেই হত্যা করেন নি, যেসব জায়ান্ট অলিম্পিয়ান দেবতাদের আঘাতে আহত হয়েছিলো, তাদেরকেও হত্যা করেন। তিনি আরো যাদেরকে হত্যা করেছিলেন, সেইসব জায়ান্ট হচ্ছে ইপহিয়ালটেস, লিওন, পেলোরিয়াস, থেওডামাস এবং পরফাইরিয়ন।

Gigantomachy

জায়ান্টদের সাথে অলিম্পিয়ানদের যুদ্ধ (শিল্পী- ফ্রান্সিসকো বেইয়েও সুবিয়াস, ১৭৬৪ সাল)

 

জায়ান্ট পরফাইরিয়ন যখন হারকিউলিসকে আক্রমন করছিলো, তখন জিউস পরফাইরিয়নের মনে হেরার প্রতি কাম-বাসনা জাগ্রত করে পরফাইরিয়নকে বিভ্রান্ত করে। পরফাইরিয়ন যখন হেরাকে শ্লীলতাহানি করতে উদ্যত হয়, হেরার বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলে, তখন হেরা সাহায্যের জন্য কাঁদতে থাকলে জিউস তার বজ্র দিয়ে পরফাইরিয়নকে আহত করেন এবং হারকিউলিস সঙ্গে সঙ্গে তীর দিয়ে তাকে হত্যা করেন। যদিও কেউ কেউ বলেন, এপোলো জায়ান্ট ইপহিয়ালটেসের সাথে পরফাইরিয়নকেও হত্যা করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, এপোলো ইপহিয়ালটেসের বাম চোখ নষ্ট করেছিলেন আর হারকিউলিস নষ্ট করেছিলেন ডান চোখ।

Gigantomachy

শিল্পীর তুলিতে – জায়ান্টদের সাথে অলিম্পিয়ানদের যুদ্ধ

 

ডায়োনিসাস, অলিম্পাসে প্রবেশকারী সর্বশেষ দেবতা, যার মা ছিলেন মরণশীল, তিনিও এই যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি থিরসাস নামক এক অস্ত্র দিয়ে জায়ান্ট ইউরাইটাসকে হত্যা করেন, দেবী হেকাটে টর্চ দিয়ে জায়ান্ট ক্লাইটিয়াসকে অন্যদিকে সজোরে ঘুরিয়ে দেন আর জায়ান্ট মিমাসকে হত্যা করেন হেফাস্টাস তার অগ্নি-বর্ণ ধাতুর তৈরী ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে। দেবী এথেনা জায়ান্ট এনকেলাডাসের দিকে চ্যারিয়ট চালনা করলে, সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুরো সিসিলি দ্বীপটিকেই এনকেলাডাসের দিকে ছুড়ে মারেন এবং আরেক জায়ান্ট পাল্লাসের শরীরের চামড়া ছালিয়ে নেন, সেই চামড়া দিয়ে যুদ্ধের সময়ে এথেনা নিজেকে রক্ষা করেন। ইতোমধ্যে সমুদ্রদেব পসাইডন জায়ান্ট পলিবোটেসকে সমুদ্র জুড়ে তাড়া করতে থাকেন এবং যখন তারা কজ দ্বীপে আসেন, পসাইডন কজ দ্বীপের একটি অংশ ভেঙ্গে পলিবোটেসের দিকে ছুড়ে দেন। যদিও অন্যরা বলে থাকেন, পলিবোটেস পুরো কজ দ্বীপের নিচেই চাপা পড়েছিলো। হার্মিস পাতালরাজ হেডসের অন্ধকারের হেলমেট পরিধান করে জায়ান্ট হিপ্পোলাইটাসকে, দেবী আর্টেমিস জায়ান্ট গ্রাটিয়নকে, এমনকি তিন নিয়তি বোনও (মোইরাই) এই যুদ্ধে জায়ান্ট এগ্রিয়াস ও জায়ান্ট থোয়াসকে হত্যা করেন। অনেকে বলেন, বাকি জায়ান্টদের হারকিউলিস ডেলোসের পূর্বদিকের এক ছোট দ্বীপ মাইকোনোসের নিচে প্রোথিত করেছিলেন।

Gigantomachy and Athena

এথেনা এক জোড়া জায়ান্টদের সাথে যুদ্ধ করছেন (ইস্তাম্বুল আর্কেওলজিকাল মিউজিয়াম, তুরস্ক)

 

এই যুদ্ধে অলিম্পিয়ান দেবতাদের পক্ষে আরো সাহায্য করেন সমুদ্রদেব পসাইডনের সন্তান ট্রাইটন। ট্রাইটন তার নিজের তৈরী ট্রাম্পেট এমনভাবে বাজান, জায়ান্টরা তা শুনে ভয় পেয়ে পালাতে থাকে। এমনকি দেবতা ডায়োনিসাসের সাথী ছাগল মুখো সাটাইরোস-রা যখন জিউসকে সাহায্য করতে আসে, তখন যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে ভয় পেয়ে তারা গাধার ডাক ডাকতে থাকে। এই অদ্ভুত শব্দ আগে কখনো জায়ান্টরা শোনেনি, তাই জায়ান্টরাও ভয় পেয়ে পালাতে থাকে। কথিত আছে জায়ান্টরা এথেনার দিকে একটি ড্রাগন ছুড়ে মারলে, এথেনা সেই ড্রাগনটি কেড়ে নিয়ে আকাশের দিকে নিক্ষেপ করেন, সেটি তখন আকাশের সর্প মন্ডলে পরিণত হয়।

সর্প মন্ডল

সর্প মন্ডল

 

জায়ান্টরা যুদ্ধে পরাজিত হলে, গায়া আরোও ক্ষুদ্ধ হোন। অলিম্পিয়ানদের সরিয়ে টাইটানদের বসানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি এক অদ্ভুত কাজ করেন। গায়া তখন তাঁর ভাই টারটারাসের সাথে মিলিত হোন। টারটারাসের সাথে মিলনের ফলে গায়া জন্ম দেন এক ভয়ংকর দানবের, টাইফোয়িয়াস বা টাইফুন।

টাইফোয়িয়াস- শিল্পীর তুলিতে

টাইফোয়িয়াস- শিল্পীর তুলিতে

 

টাইফোয়িয়াস এতো বিশাল দানব ছিলো যে, এর উপরের অংশ আকাশের তারা ছুঁয়েছিল, আর দুই হাত পৌঁছে গিয়েছিলো পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে। একটি মানবীয় মাথার পরিবর্তে এর ঘাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছিলো একশটি ড্রাগন মাথা। কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন, টাইফোয়িয়াসের মাথা মানবীয়ই ছিলো, বরঞ্চ তার আঙ্গুলগুলো ছিলো ড্রাগন মাথার মতো। এর নিচের অংশটুকু দেখতে ছিলো দৈত্যাকৃতি সাপের মতো সর্পিলাকার, এবং যখন এটি ছড়িয়ে দিতো, তখন আকাশের তারা ছোঁয়া মাথাকেও পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারতো, আর সবসময় হিস হিস শব্দ করতো। টাইফোয়িয়াসের পুরো শরীরটাই ডানা দ্বারা আবৃত ছিলো, এর চোখে আগুনের ঝলক দেখা যেতো। সবকিছু মিলিয়ে অলিম্পিয়ান দেবতারাও টাইফোয়িয়াসকে খুব ভয় পেতেন।

এই টাইফোয়িয়াসকেই গায়া লেলিয়ে দিলেন অলিম্পিয়ানদের বিরুদ্ধে। টাইফোয়িয়াস প্রথমে প্রচন্ড তর্জন-গর্জনের সাথে শহরগুলোকে ধ্বংস করতে লাগলো, পাহাড়গুলোকে নিক্ষেপ করতে লাগলো বহুদূরে। টাইফোয়িয়াসের ভয়ে ভীত হয়ে দেবতারা প্রায় সবাই পালিয়ে মিশরের দিকে চলে গেলেন। সেখানে তারা বিভিন্ন পশুর আকৃতি ধারণ করে লুকিয়ে রইলেন। জিউস ধারণ করলেন ভেড়ার রুপ, হেরা হলেন গাভী, আফ্রোদিতি নিলেন মাছের রুপ, হেফাস্টাস নিজেকে পরিণত করলেন ষাড়ে। কেউ কেউ বলেন, হারকিউলিসও আইবিস পাখিতে নিজেকে রুপান্তরিত করেছিলেন। একমাত্র এথেনাই ছিলেন অলিম্পাস পাহাড়ে। তিনি জিউসকে তিরস্কার করতে লাগলেন তার ভীরুতার জন্য, বলতে লাগলেন কাপুরুষ, যতক্ষন না পর্যন্ত জিউস নিজের আসল রুপ ধারণ করে টাইফোয়িয়াসের মুখোমুখি হলেন।

জিউস বজ্র এবং বিদ্যুৎ দিয়ে সজ্জিত হয়ে একটি কাস্তে দিয়ে টাইফোয়িয়াসকে আঘাত করে ক্যাসিয়ন পাহাড় (যেখানে সিরিয়া অবস্থিত) পর্যন্ত ধাওয়া করেন। টাইফোয়িয়াসকে মারাত্মক আহত দেখে জিউস তার সাথে হাতাহাতি লড়াই শুরু করেন। কিন্তু লড়াইয়ের এক পর্যায়ে টাইফোয়িয়াস হঠাৎ করেই সর্পিলাকার নিচের অংশ দিয়ে জিউসকে পেচিয়ে ধরে, জিউসের হাত থেকে কাস্তেটি কেড়ে নেয়। খুব সহসা টাইফোইয়িয়াস জিউসকে দুর্বল করে ফেলে, যখন জিউসের হাত এবং পায়ের কন্ডরা (টেন্ডন) কেটে দেয়। এরপর পারনাসসাস পাহাড়ের ঢালে কোরিচিয়ান গুহাতে জিউসকে নিয়ে বন্দী করে রাখে এবং পাহারায় রাখে তার বোন ডেলফাইনে-কে, যে হচ্ছে ড্রাগন- অর্ধেক পশু, অর্ধেক মানবী।

টাইফোয়িয়াসের সাথে জিউস যুদ্ধ করছেন

টাইফোয়িয়াসের সাথে জিউস যুদ্ধ করছেন

 

যা হোক, জিউসের সন্তান হার্মিস এবং এজিপ্যান নামের ছাগল-পেয়ে এক দেবতা জিউসের কন্ডরাগুলো ঠিক করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে জিউস তার সমস্ত শক্তি ফিরে পান, স্বর্গ থেকে হঠাৎ করে একটি ডানাওয়ালা ঘোড়া একটি চ্যারিয়ট নিয়ে নেমে আসে। বজ্র নিক্ষেপ করতে করতে জিউস টাইফোয়িয়াসকে তাড়া করতে থাকে, এক পর্যায়ে তারা সিসিলি দ্বীপে পৌঁছালে, জিউস প্রকান্ড এটনা পাহাড়কে টাইফোয়িয়াসের দিকে ছুড়ে মারেন এবং পাহাড়ের নিচে আটকিয়ে রাখেন। এভাবেই টাইফোয়িয়াসের সাথে জিউসের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং টাইটানদের উপর অলিম্পিয়ানদের চূড়ান্ত জয়লাভ সাধিত হয়। জিউস পরিণত হোন একচ্ছত্র নেতায়, সব দেবতাদের রাজায়।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s