সেরা তিন শব্দ

সেদিন সকাল বেলায় ভোরের সূর্য
জানালায় উঁকি দিয়ে
কানে কানে আমায় বললো,
‘তুমি যখন তার কাছে যাবে,
একটি লাল গোলাপ নিয়ে যাবে’ ।
আমি টকটকে লাল গোলাপের কাছে গেলাম।
গোলাপটি আমাকে দেখেই বলে উঠল,
‘আমি কাঁটাযুক্ত, তুমি রজনীগন্ধ্যার কাছে যাও’।
আমি একগুচ্ছ রজনীগন্ধ্যার কাছে গেলাম।
রজনীগন্ধ্যার একটি স্টিক আমাকে
সাদরে বরণ করে বললো,
‘আমি অতি সাধারণ, তুমি বরং
স্বর্ণ অশোকের কাছে যাও’।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের কোনো এক প্রান্তে-
আমি স্বর্ণ অশোকের কাছে গেলাম।
‘আমি রসহীন, তুমি যাও তার কাছে
দুর্লভ পারুল ফুলের মালা নিয়ে’।
রমনা পার্কে কারো অযত্ন, অবহেলায় বেড়ে উঠেছে
দু’টি পারুল গাছ, তা কেউ জানে না।
আমি সেই পারুলের কাছে গেলাম।
কিন্তু হায়! সমস্ত পারুল ফুল ঝরে পড়ে আছে।
শিশির সিক্ত নয়নে যেই আমি ফিরে আসবো
তখনই তারা কথা বলে উঠলো,
যেন আমায় বললো-
‘তুমি তার কাছে যাও-
পৃথিবীর সেরা তিনটি শব্দের ডালি সাজিয়ে
আমি তোমাকে ভালোবাসি’।

ছায়া-শ্বাপদ

নতুন একটি স্বপ্ন দেখছি-
কিন্তু একটা তেলাপোকা
বিদঘুটে, ছয় পেয়ে-
মাথার মধ্যে কিলবিল করছে।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম থেকে
উঠে দেখি-
অশুভ প্রেতাত্মারা কালো থাবা
বাড়িয়ে বসে আছে।
আকাশের দিকে তাকাই-
সেখানে মাথার উপর গাংচিলেরা
উড়ে বেড়াচ্ছে।

চোখ বন্ধ করি-
মনে প্রানে চাই তোমাকে দেখতে।
তুমি লাল শাড়ী পরে একটার পর
একটা-এভাবে চারটা
দরোজা খুলে আমার দিকে এগিয়ে আসছো।

কিন্তু এ কি! তোমার চোখ বিষন্ন কেন?
চারটা দরোজাই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কেন?

আমি চিৎকার করে ডাকি তোমাকে-
মরা কান্না ভেসে আসে দূর থেকে।
আকাশের দিকে তাকাই-
গাংচিলেরা দ্রুত নিচে নেমে আসছে।
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম থেকে
উঠে দেখি-
অশুভ প্রেতাত্মারা কালো থাবা
দিয়ে আমাকে ছুঁয়ে ফেলছে।
মাথার মধ্যে বিদঘুটে, ছয় পেয়ে
একটা তেলাপোকা ক্রমশঃ বড় হচ্ছে,
এখন আর তা কিলবিল করছে না-
মনে হচ্ছে যেন মগজ খাচ্ছে।

আমি বড্ড ভয় পাচ্ছি, বড্ড ভয়-
পাছে নতুন স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়।

ভালোবাসা মানে

ভালোবাসা মানে তুমি কি জান?
ভালোবাসা মানে
টুকরো টুকরো স্মৃতি;
তিন চাকার সাইকেলে চড়া
পর্দা ঘেরা, হাতে ধরা
সারা শহর ঘুরে বেড়ানো ।

ভালোবাসা মানে-
দূরে কোথাও চলে যাওয়া
সারাটি দিন তোমার মাঝে
আমাকে ফিরে পাওয়া ।

ভালোবাসা মানে-
হিমুর মতো সারা রাত রাস্তায় থাকা,
তোমার কাছে আপনাকে
উজাড় করে দেওয়া ।

ভালোবাসা মানে-
বহুদিন পর তোমাকে দেখা, যেন
আকাশে উড়ে বেড়ায় পায়রারা
সদ্য উড়তে শেখা ।

ভালোবাসা মানে-
স্যারের বাসা বাদ দিয়ে
মাঠে-ময়দানে যাওয়া,
পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্ত পাখির নীড়ে ফেরা ।

ভালোবাসা মানে-
মিষ্টি আদর, স্মৃতিময় দুপুর,
বৃষ্টির ঝাপটা,
ভালোবাসা মানে-
মৃদু খুনসুটি, দৃঢ় চাপ, অভয় বাণী
আর অসহায় হয়ে পড়া ।
ভালোবাসা মানে তুমি কি জানো?

ভালোবাসা মানে-
চৌদ্দই ফেব্রুয়ারী
শেরাটনে শুয়ে পড়া,
কিংবা জোছনা রাতে
সারা রাত চাঁদ দেখা ।

ভালোবাসা মানে-
থার্টি ফাষ্টের উচ্ছ্ব্লতা
রাস্তায় রাস্তায় যুবকের দাঁড়িয়ে থাকা
গাড়ী ভাংচুর আর
তরুণীদের আর্ত চিৎকার ।

ভালোবাসা মানে-
একুশের প্রথম প্রহরে
খালি পায়ে হাঁটা
হাতে রক্তকরবী, সন্ধ্যামালতী
আর একদলা থু থু ।
ভালোবাসা মানে-
দুই ঈদের সেলামী
ফিরনী, পায়েস, জর্দা
চটপটি আর
প্রেমহীন আনন্দমেলা ।

ভালোবাসা মানে-
ষোলই ডিসেম্বরের রক্তলাল পতাকা,
জাতীয় স্টেডিয়ামে
শিশুদের সহিষ্ণুতার পরীক্ষা ।

ভালোবাসা মানে-
ছাব্বিশে মার্চ
প্যারেড ময়দান
বীরাঙ্গনার হাসি ।

ভালোবাসা মানে তুমি কি জানো?

ভালোবাসা মানে-
প্রথম চুমু খাওয়া
হৃদয় আবেশ, সুরের মূর্ছনা
বিছানায় যাওয়া,
আবেগের সাথে প্রবঞ্চনা ।

ভালোবাসা মানে-
বদ্ধ ঘর, জমাট গন্ধ
দরজাতে কালো পরদা,
দীর্ঘশ্বাস ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনা
ভাভ বিহ্ববল মৌ্নতা ।

ভালোবাসা মানে-
আকিজ বিড়ি, প্রথম সন্তান
জিন, ভদকা, রাম
তোমার কাছ হতে না পাওয়া
চিঠির নীল খাম ।

ভালোবাসা মানে-
শর্তারোপ করা, ক্ষমা চাওয়া
নিজেকে ছোট করা ।
ভালোবাসা মানে-
অবহেলা, উপহাস লাঞ্চনা
আর শ্মশানের মড়া ।

ভালোবাসা মানে-
কষ্ট দেওয়া, যন্ত্রণা
ভুলে থাকার শত মন্ত্রণা,
ভালোবাসা মানে-
দেখেও না দেখার ভান করা,
গাড়ী না থামিয়ে চলে যাওয়া ।
ভালোবাসা মানে তুমি কি জানো?

ভালোবাসা মানে-
অবশেষে নিজেকে ফিরে পাওয়া
তোমার মাঝে আপনাকে লীন করা ।
ভালোবাসা মানে-
শত সহস্র উষ্ণতা ছড়ানো
প্রথম আহবান,
নববর্ষে-
সব ভুল বুঝাবুঝির
মিষ্টি মধুর অবসান।