ছি! আমি একজন ব্লগার!

আমি একজন সাধারণ মানুষ। এই সাধারণ মানুষের যত অসাধারণত্ব, সবকিছুই ব্লগিং করতে এসে অর্জন করা। একসময় নিজেকে ব্লগার পরিচয় দিতে খুব গর্ববোধ করতাম। এই গর্বটা এভারেষ্ট-এর উচ্চতায় উঠে গিয়েছিলো শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম দিকে। ফেসবুকে আর ব্লগে লিখে কি করা যায়- তা যেনো দেখিয়ে দিতে লাগলাম আমরা। নতুন কারো সাথে পরিচয় হলে আগ বাড়িয়ে বলতাম, আমি একজন ব্লগার। আমার ডাক্তার পরিচয়টা বেমালুম ভুলে যেতাম। আর এখন? বেশ কিছুদিন যাবত আমি যে ব্লগার, সেই পরিচয়টাই ভুলে যেতে চাচ্ছিলাম। আর লিখবো না, লিখবো না বলে- কেনো যে আজ আবার লিখতে বসলাম!

(১)    

শাহবাগে যে অবস্থান ধর্মঘট রাজাকার কাদের মোল্লার রায়ের পর শুরু হয়েছিলো, সত্যি কথা বলতে গেলে তখন আমি ইমরান সরকারের নামও জানতাম না। অথচ তিনি একজন ডাক্তার, আর আমিও ডাক্তার! অবশ্য সব ডাক্তারের পক্ষে সবাইকে চেনা সম্ভব নয়, তাই না? খুব খুশি হয়েছিলাম, একজন ডাক্তারকে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে দেখে। হৃদয়ের দাবীর সাথে শাহবাগের দাবীর মিল দেখে একাত্মতা অনুভব করলাম। চাকরীর জন্য থাকতাম চাঁদপুরের মতলবে, কিন্তু মন পরে থাকতো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। টিভিতে দেখতাম ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত প্রজন্ম চত্বর। খুব ভালো লেগেছিলো- এই শ্লোগানের নতুন করে জন্মে। কিন্তু মনের গহীনে চিন চিন করে উঠলো- ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ যে নাই! বুঝতে পারলাম- এটাকে দলীয় শ্লোগান বলে বর্জন করা হয়েছে। অথচ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলেই একাত্তরে সবাই যুদ্ধ করতে গিয়েছিলো, তখন দলীয় শ্লোগান মনে হয় নি। মানি, এই ব্যর্থতা আওয়ামী লীগেরই, তারাই বঙ্গবন্ধুকে দলীয়করণ করেছে। ভেবেছিলাম এতে যদি বিএনপিও সমর্থন দেয়, তাহলে এই ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বর্জন হজম করা যাবে। কিছু ছাত্রদল সমর্থক বা নেতাদের শাহবাগে দেখে আশান্বিতও হয়েছিলাম। বিএনপির নেতাদেরও বেশ কিছুদিন নিশ্চুপ থাকার পর আন্দোলনের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম।

মানুষ ভাবে এক, কিন্তু হয় আরেক। আরেকবার বিশাল ঢাক্কা খেলাম মহাসমাবেশে ইমরান সরকারের বক্তব্য শুনে। এ কি! এটাতো কোনো নেতার ভাষন নয়! ইমরানের আশে পাশের লোকগুলোকে দেখেও আশাহত হলাম। জানলাম, তিনি না কি স্বাচিপের নেতা! তবুও সবকিছু মেনে নিলাম প্রাণের দাবীর জন্য।

(২)

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে অনেকের কথা শুনতে লাগলাম। অনেক নেতা, অ-নেতা অনেক রকম কথা বলতে লাগলো। কেউ কেউ বলে উঠলো, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নিষিদ্ধ চাই। তারা ভুলে গেলেন কিসের বিরুদ্ধে তারা লড়তে শাহবাগে জড়ো হয়েছেন। আমার মতো যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পছন্দ করি না, তারা প্রমাদ গুণলাম, কারণ- এতে আমও যাবে, ছালাও যাবে- কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। যুদ্ধে খুব কৌশলী হতে হয়, কিন্তু শাহবাগের নেতারা দেখলাম অন্যের পরামর্শে চলতে লাগলো। জনগন কি চায়, প্রজন্ম কি চায়- সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। আর তাই শাহবাগের আন্দোলনকারীদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই নেতারা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন- শাহবাগে টানা অবস্থান থেকে সরে আসার। সেদিন রাতেই খুন হলো রাজীব।

শাহবাগের নেতারা অসাধারণ এক অস্ত্র তুলে দিলেন এবার জামাত-শিবিরের হাতে। সামনে চলে এলো আস্তিক-নাস্তিক বিষয়। ফেসবুক, ব্লগে বিশাল বিশাল গবেষনা হলো নতুন বানানো ব্লগের লেখাগুলো রাজীবের নয়। কিন্তু এতে কি প্রমান হয়ে যায় রাজীব আস্তিক ছিলো? জামাত শিবির খুব কৌশলের সাথে ব্লগারদের নাস্তিক বানিয়ে দিলো, অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকেও একই আন্দোলনে শরিক করালো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নিষিদ্ধের ধুয়া তুলে। আমাদের পাপেট নেতা ইমরান সরকারের কৌশল চরমভাবে মার খেলো। এই আন্দোলন যে আস্তিক আর নাস্তিকের নয়- সেটা বুঝাতে চরমভাবে ব্যর্থ হলেন তারা। অবশ্য নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ঠিকই আদায় করে নিলেন। আর আন্দোলন হয়ে গেলো স্তিমিত। তবুও আন্দোলনের প্রতি আমার সমর্থন ছিলো, কারণ মূল দাবীতো কাগজে কলমে তখনো ছিলো জামাত শিবিরের নিষিদ্ধকরণ আর যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি।

(৩)

এই সময়ে আন্দোলনে কিছু স্ববিরোধীতা লক্ষ্য করলাম। দেখতে পেলাম আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বক্তব্য দিতে পারছেন, আবার কিছু নেতা লাঞ্চিত হচ্ছেন। বামপন্থী নেতারা আবার দেখলাম খুব ভালোভাবেই বক্তব্য দিচ্ছেন। আর ইমরানের আশে পাশে তো ছাত্রলীগের নেতারা ছিলেনই। আবার বলা হচ্ছে এই আন্দোলন রাজনীতিবিদদের নয়। আসলে কি বলতে হবে, কি করতে চাচ্ছে- শাহবাগের নেতারা কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনাই দিতে পারছিলো না। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবীদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীসভার সভাতে মন্ত্রীদের বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তিরস্কার করলেন। সেই বেফাঁস মন্তব্য কি? অচিরেই জামাত শিবির নিষিদ্ধ হবে।

আমরা তখনই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য বুঝে গেলাম। তিনি জামাত নিয়ে ভোটের খেলা খেলছেন। ইমরান সরকারও একটি বালকসুলভ খেলা খেললেন- আল্টিমেটাম দিলেন ২৬শে মার্চের মধ্যে জামাতকে নিষিদ্ধের। কিন্তু চাপে রাখার জন্য সেরকম কোনো কর্মসূচী দিলেন না, মুখে ঝুলে রইলো মহাত্মা গান্ধীর সেই মহান বানী, বর্তমান যুগে যা অচল- ‘অহিংস আন্দোলন’।

(৪)

এক সময়ের আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে এসেই শাহবাগের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বলা শুরু করলেন। উনাকে ধন্যবাদ- উনি উনার স্ট্যান্ট জাতির কাছে স্পষ্ট করেছেন। উনি পরিষ্কারভাবেই সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে জানিয়ে দিলেন, তিনি জামাতকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু সেই সাহস দেখালেন না। তাই ২৬শে মার্চের মধ্যে জামাত শিবির নিষিদ্ধ হলো না। আমাদের পরম নেতা ইমরান সরকার ঘোষনা দিলেন, এবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিবেন। আমার কাছে মনে হলো প্রধানমন্ত্রী বরাবর তার আসনে সংসদ নির্বাচনের জন্য আবেদন করলেন।

আন্দোলনের মাঝে এক চমৎকার ঘটনা ঘটেছিলো। ইমরানের দাদা যে রাজাকার তা নিয়ে রাজাকার পত্রিকা তথ্য উপাত্ত হাজির করলো। আমরা ঝাপিয়ে পরলাম ইমরানের দাদাকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে। আমাদের  কিছু ব্লগার নেতা বললেন, দাদা কি কাজ করলো, সেটা বড় কথা নয়, ইমরান কি কাজ করছে- সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। আমরা হাততালি দিলাম।

২৬শে মার্চ রাত থেকে শহীদ রুমী স্কোয়াডের কিছু ছেলে জামাত নিষিদ্ধের দাবীতে আমরণ অনশন শুরু করলেন। আমাদের সেই ব্লগার নেতারাই আবার বললেন, এদের মধ্যে কে যেনো বঙ্গবন্ধু খুনী বজলুল হুদার সন্তান, তাই এই অনশনে তাদের সমর্থন নেই। আমাদের সুশীল সমাজও বোধহয় সমর্থন দিলেন না, তাই অনশনের ১০০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো সমাজসেবক অনশন ভাঙ্গাতে পানির গ্লাস হাতে এগিয়ে এলেন না। ব্লগে, ফেসবুকে আমরা এই অনশনকারীদের চৌদ্দগুষ্ঠির উদ্ধার করতে লাগলাম।

(৫)

আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না। যে আশা নিয়ে, যে উদ্দীপনা নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো, তার অবশিষ্ট আর কিছু নেই। কয়েকদিন আগে কাকে যেনো বলেছিলাম, আমি ব্লগে লিখি। তার তৎক্ষনাত প্রতিক্রিয়া ছিলো, “ও, তুমি তাহলে নাস্তিক!” শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে লাভ হলো আমাদের-

–      নাস্তিক উপাধি পেলাম

–      সরকারকে ব্লগ আর ফেসবুকে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিলাম

–      শহীদ রুমী স্কোয়াডের অনশনকে উপহাস করে আজ অমানুষও হলাম

নিজেকে তাই এখন আর ব্লগার পরিচয় দিতে খুবই লজ্জা লাগে। মনে মনে বলি, ছি! আমি একজন ব্লগার!

পরিশিষ্টঃ

এই লেখাটা চরম হতাশা নিয়ে লেখা। আসলে শাহবাগের প্রারম্ভে যে প্রবল উচ্ছ্বাস ছিলো, আশা ছিলো- তার কোনোটারই আর দেখা পাচ্ছি না। পাপেট নেতারা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে, খালেদা জিয়া তার সম্পর্কে ধারনাটাকে আরো পাকাপোক্ত করেছেন, শেখ হাসিনা তার মুখোশটাকে খুলে ফেলেছেন, আমরা ব্লগাররা যেভাবে একতাবদ্ধ হয়েছিলাম, সেখানে এখন কেবলই অনৈক্য আর বিশৃঙ্খলা। কোনো সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই, নেই কোনো কান্ডারী।

আমরা সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা চাই, শক্ত মেরুদন্ডের নেতা চাই, সকল যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই, জামাত শিবিরের নিষিদ্ধ চাই, জামাত শিবিরের সকল প্রতিষ্ঠানের বর্জন চাই। কেউ কি আছেন আশার বানী নিয়ে কোনো লেখা লিখবেন, আমাদেরকে আবার উদ্দীপিত করবেন?

(পুনশ্চঃ যে কাজটা করা উচিত ছিলো গণজাগরন মঞ্চ থেকে, সেই কাজটা করছে শহীদ রুমী স্কোয়াড। স্যালুট তাদেরকে।)

প্রজন্ম চত্বর ও জামালপুরের শেখ ফজল

আজ বিকাল চারটার সময় মতলব আইসিডিডিআর,বি-তে আমরা যখন তিন মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করছিলাম, তখন চিন্তাই করিনি একটু পরেই এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটবে! নিরবতা পালন শেষে যখন হাসপাতালে ঢুকবো, এক অজানা নম্বর থেকে এক ফোন এলো। “হ্যালো” বলার পর অপর প্রান্ত থেকে একজন মধ্য বয়স্ক কন্ঠের এক পুরুষ জানতে চাইলেন আমি ডাঃ নিয়াজ কি না!

যখন তিনি নিশ্চিত হলেন, আমিই ডাঃ নিয়াজ, উনি বললেন, “আমি শেখ ফজল, জামালপুর থেকে বলছি। আমি প্রজন্ম চত্বর নিয়ে একটি কবিতা লিখেছি। আপনি কি এই কবিতাটি সেখানে আবৃত্তি করানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন?” আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না! হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম- আমার কথা কে বললো বা আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন? জানতে পারলাম, নেটে আমার সুড়ঙ্গ ব্লগ থেকে আমার সম্পর্কে জেনেছেন এবং সেখানে আমার ফোন নম্বর পেয়েছেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, “আমি আসলে এই ব্যাপারে যোগ্য ব্যক্তি নই। তবে আপনি আমার কাছে মেইলে কবিতাটি পাঠিয়ে দিতে পারেন, আমি ফেসবুকে শেয়ার করতে পারি। সেই রকম কারো চোখে যদি পড়ে, তাঁর যদি ভালো লাগে- তাহলে আপনার আবেগ দিয়ে লেখা এই কবিতাটি উনি প্রজন্ম চত্বরে পড়তেও পারেন। আর যদি না আবৃত্তি করা হয়, আমায় ক্ষমা করবেন”।

তিনি আমাকে কবিতাটি পাঠিয়েছেন। আমি হুবুহু তুলে দিলাম–

তুমিই একমাত্র পার
—–শেখ ফজল

উৎসর্গ: প্রজন্ম চত্ত্বর সমীপে

ওগো, জন্মভূমি মা আমার,
আমরা তোমার সন্তান সন্ততিরা-
মহা ঘোরকাল অতিক্রম করছি!
পৃথিবীর জাতি গোষ্ঠিতে যখন
বাঙ্গাল বলে পরিচিত ছিলাম,
ধর্মভাইদের লম্বাহাত থেকে-জাতিগত পরিচয়ের
সনাক্তচিহ্ন-মাতৃভাষাটুকু রক্ষা করতে
কতই না নির্যাতন-অপমান,প্রাণসংহার,
সরিষাভূতের ষড়যন্ত্র সহ্য করতে হয়েছে।
সেই সব নির্মম, নিষ্ঠুর, নিপীড়নই-শিক্ষা দিয়েছে আজ-
আত্মমর্যাদা, আত্মধিকার এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্র।

মাগো, একাত্তরের সেই ১১ সেক্টরের বীরচিত যুদ্ধ-
হিমালয় সমান, জগদ্দল অগ্নিযুগের মর্ম ব্যথা-
মরুভূমির লু-হাওয়াসম শোক-বিরহের হাহাকার-
মেঘে ঢাকা চাঁদের মত অম্লান কলঙ্ক-
কত বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবিগণের প্রাণ উৎসর্গ ।
কত যুদ্ধশিশুর উদাস চাওনির অসহায়ত্ব-
কত বঙ্গমাতার-লাজে নত ঘোমটার অশ্রুরুদ্ধ অভিমান-
কত শহীদানের বীরচিত আত্মদানের মহিমা-
মা-তোমাকে করেছে আজ গরীয়ান গরীয়সী।
তুমি স্বগর্বে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছো।
সবুজ আচল বিছিয়ে দিয়েছো তোমার পরিসীমায়।
তুমি আজ বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষার গরীয়সী জন্মদাত্রী।

আজ তোমার সন্তানেরা বিন্দু বিন্দু ঐশ্বর্য সঞ্চয় করে,
তোমাকে ঐশ্বর্যবান করে তুলেছে।
আজ তোমার সন্তানেরা নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে-
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে।
আজ তোমার সন্তানের আঁধার ঘোচাতে
সূর্যটাকে ধারণ করেছে বক্ষে।
আজ তোমার সন্তানেরা ন্যায়ের যুদ্ধে
আপোষহীন কলম নিয়েছে হাতে।
আজ তারা-দূরদর্শী প্রতিবাদ তুলে নিয়েছে কন্ঠে।

এ হেন সোনালি সকালে-
কারা এল কপাল ঢাকতে,তোমার কালো নেকাবে?
কারা এল কালো চশমা পড়াতে,তোমার চোখে?
কারা এল আফগানিস্তানের মত-বোলচাল মতলব নিয়ে?
কারা এল বিজয়ধব্জাধারীদের ধরাশায়ীর ধ্যানজ্ঞান নিয়ে?
লাল সূর্যটাকে ছিনিয়ে নিয়ে
চাঁদ-তারা বসনোর কূট-কূটার্থের কৌশল নিয়ে?
ওগো জন্মভূমি মা আমার-
তুমিই একমাত্র পারো,
তোমার সন্তানদেরকে সঠিক সুনির্দিষ্ট পথে চালাতে।
পারো নতুন প্রজন্মকে উদ্দাম উদ্দীপিত করতে।

তারাই পারে প্রজন্ম চত্ত্বরে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির মঞ্চ গড়তে।
তারাই পারে সকল দুরভিসন্ধি উচ্ছেদ করতে।
তাদের সামনে প্রশ্ন আজ-
মাতৃভাষায় সংবিধান থাকবে কী না!
না কি, জাতীয় সঙগীত হবে-
“পাক সার জমিন সাদ বাদ”?

কবি পরিচিতিঃ
নাম- শেখ ফজল
পিতাঃ মৃত শেখ আজিজ মিছির
গ্রামঃ মহিরামকুল, পোস্টঃ ভাঙ্গুনীডাঙ্গা, উপজেলাঃ মেলান্দহ, জেলাঃ জামালপুর
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ ১) প্রিয় ভালোবাসা তোমাকে দিলাম, ২) মায়ের আশা মায়ের ভাষা, ৩) অধরা মাধুরী, ৪) ভালোবাসার তিন রং, ৫) প্রাণের দামে কেনা এই লাল সবুজের দেশ (পান্ডুলিপি প্রস্তুত)

শেখ ফজল ভাই আমাকে ঠিক যেভাবে তাঁর কবিতাটি এবং কবি পরিচিতি পাঠিয়েছেন- আমি সেইভাবেই তুলে দিলাম।

শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর, আমার অহংকার

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। আমার জন্মই হয় নি তখন। কিন্তু আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর কাছে শুনেছিলাম কী আবেগ নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষ একাত্ম হয়েছিলেন দেশ মাতৃকাকে হানাদার বাহিনীর শিকল থেকে মুক্ত করতে। তাঁর কাছে আরও শুনেছিলাম কিছু অমানুষ, হায়েনাই শুধু স্বাধীনতাঁর বিরোধী ছিলো এবং সেই সব কুলাঙ্গার মীর জাফরদের জন্য আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের সেরা সন্তানদের। আমি আমার বাবার কথা শুনে অবাক হয়েছি, আবার হেসেছি। তখন যে দেশের ক্ষমতায় স্বৈরাচার এরশাদ! বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম- কিছু বুঝতে পারার পর থেকেই দেখছি স্বৈরতন্ত্র, দেখছি মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত, দেখছি রাজাকাররা পুনর্বাসিত, শুনেছি রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া। বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম- তোমরা কি আমাদেরকে এই সব দেবার জন্য স্বাধীনতা এনেছিলে? প্রশ্ন করেছিলাম, ৭১ এ তোমরা কীভাবে সবাই এক সত্ত্বায় মিশে গিয়েছিলে? আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা কোন উত্তর দিতে পারে নি, নিশ্চল নিশ্চুপ ছিলো। তাঁর চেহারায় সেদিন দেখেছিলাম প্রচন্ড লজ্জা, হতাশা, ক্ষোভ।

৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী গণ আন্দোলনে আমি ঢাকায় ছিলাম না। তখন খুব একটা বড়ও ছিলাম না। পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র আমি তখন। নভেম্বর থেকে আন্দোলনের আঁচ কিছুটা টের পেতাম, কিছুটা বুঝতে পারতাম। বাবার কাছে থেকে প্রতিদিনের আপডেট শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। মনে আছে ৬ই ডিসেম্বর স্বৈরাচারের পতনের পর ছোট্ট মৌলভীবাজার শহরে চিৎকার করে বেড়িয়েছিলাম- “হৈ হৈ রৈ রৈ, এরশাদ চোরা গেলো কৈ?” কিন্তু তখনো গণ জাগরণের মূল উত্তাপটা ঢাকায় না থাকাতে আর ছোট হওয়াতে অতটা বুঝতে পারে নি। কিন্তু নতুন সূর্য উঠার দিন যে সামনে আসতে যাচ্ছে- সেটা বুঝতে পারছিলাম।

খুব দ্রুতই আশাভঙ্গ হলো, যখন একদিন বাবা অফিস থেকে এসে প্রচন্ড হতাশ কন্ঠে জানালেন, রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ্বাস প্রেসিডেন্ট হয়েছে। রাজাকারদের দল, হায়েনাদের দল জামাতে ইসলামী ক্ষমতার জোটে আছে। রাজাকার, যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবে না! তাই ৯৬-এ আমি যখন এস এস সি পরিক্ষার্থী, মনে আছে পড়াশোনা বাদ দিয়ে “নৌকা, নৌকা” বলে চিৎকার করেছি- আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করার জন্য নয়, ভেবেছিলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ রাজাকারমুক্ত হবে। বিধাতা মুচকি হেসেছিলেন! আমরা একই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ দেখলাম। জনগনকে তারা বোকা ভেবেছিলো, কিন্তু জনগন বোকা নয়। আওয়ামী লীগের জায়গায় এলো আবার বিএনপি।

কিন্তু বিএনপি খেললো চরম খেলা। রাজাকাররা জাতীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে চোখের সামনে ঘুরতে লাগলো। ততদিনে আমি এবং আমরাও অনেক বড় হয়ে উঠেছি- আসল ইতিহাস জানতে শুরু করেছি। তরুন প্রজন্মের ভিতর রাজাকার, যুদ্ধপরাধী আর জামাত শিবির বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে। কিন্তু তখনো কোনো স্বতঃস্ফুর্ত গণ জাগরণ দেখেনি। শুধু ৭১ এর একাত্ম হওয়ার ব্যাপারটি তখনো রুপকথার মতোই মনে হতে লাগলো। ভেবেছিলাম এই জনমে আর একাত্ম বাংলাদেশ দেখতে পাবো না। বিধাতা আবারো মুচকি হাসলেন।

আজ ৮ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ সাল। 


আজ বাবাকে করা একটি প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। কীভাবে তাঁরা ৭১ এ একাত্ব হয়েছিলো। আজ গন জাগরণ কাকে বলে- নিজে বুঝেছি, এর উত্তাপ গায়ে মেখেছি। আজ হারিয়ে গিয়েছি নতুন আবিষ্কারের নেশায়, উল্লাসিত হয়েছি অসম্ভব সুন্দর বাংলাদেশের অসম্ভব দেশ প্রেমিক জনগণকে দেখে, আপ্লুত হয়েছি দেশ জোড়া বন্ধু দেখে, বিহবল হয়েছি দেশের বাইরে থাকা দেশপ্রেমিকদের দেশ নিয়ে ভাবনা দেখে।

Projonmo Chattor প্রজন্মে চত্বরে জনতার ঢল (ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ফেসবুক)

কি বললেন? আপনি দেখেন নি? সময় আছে এখনো, চলে আসুন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে, স্বাক্ষী হোন এক অসাধারণ ইতিহাসের। আর অবশ্যই বজ্র কন্ঠে বলে উঠুন, “কাদের মোল্লা, নিজামী, গো আ, মুজাহিদ, সাকা, বাচ্চুসহ সকল যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি চাই, জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই, জামাত শিবির নিয়ন্ত্রিত সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বর্জন চাই।”

আসুন আপনি প্রজন্ম চত্বরে, আপনার অপেক্ষাতেই আমরা আছি।

কিছু নতুন ও পুরানো বোলচাল

আমি বোধহয় কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায় অথবা সবকিছুর প্রতিক্রিয়া বোধহয় একটু দেরীতে দেখাই। এর কারণ কি- সেটা নিয়ে ভেবেছি। দেখলাম অনেক সময় খবর দেরীতে আমার নজরে আসে, তখন আর প্রতিক্রিয়া দেখাতে ইচ্ছে করে না, অথবা অনেক সময় খবরটা জেনেও অন্য অনেকের প্রতিক্রিয়া পড়ে আর নিজেরটা জানাতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আজ যে কি হলো! কিছু নতুন পুরানো খবরের অনুভূতি জানাতে কেনো মনটা এতো আনচান করছে?

(১)

গত দুইদিন ধরে একটি খোলা চিঠি বা কলাম খুব করে পঠিত হচ্ছে। চিঠিটা যে The Washington Times-এ প্রকাশিত হয়েছে, সেটা বোধহয় একটি কারণ। আরেকটি কারণ হচ্ছে এই কলামের সাথে বাংলাদেশের নাম আছে। তবে প্রধান কারণ মনে হচ্ছে – এর লেখিকা। তিনি আর কেউ নন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, যাকে আমরা আপোষহীন নেত্রী বলে অনেক আগে থেকেই জানতাম- বেগম খালেদা জিয়া।

লেখাটির অনেক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া পড়েছি, পড়েছি মূল লেখাটাও। একই সাথে মাথায় এসেছে অনেক চিন্তাও। লেখায় কি আছে, সেটা নিয়ে আলোচনায় যাবো না, আপনারা এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। আমি শুধু আমার চিন্তাগুলিই শেয়ার করতে চাই।

আমার জেনে খুব ভালো লাগছে বেগম খালেদা জিয়ার লেখার ব্যপ্তি বাংলাদেশের সীমানা ছেড়ে মার্কিন মুলুক পর্যন্ত পৌঁছেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার বাসসের মাধ্যমে একটি লেখা কিছু অনলাইন পত্রিকা এবং ব্লগে এবং জাতীয় পত্রিকায় দিয়েছিলেন। তিনি বেশ কিছু বইও লিখেছেন। কিন্তু আমার জানা নেই তাঁর কোনো লেখা আমেরিকার মেইন স্ট্রীমের কোনো পত্রিকায় এসেছে কি না। সেদিক দিয়ে খালেদা জিয়া প্রশংসার দাবীদার। আরো একটি ব্যাপারে খালেদা জিয়া প্রশংসা দাবী করতেই পারেন, সেটি হচ্ছে- অসম্ভব সুন্দর ইংরেজী লেখার জন্য। তাঁর সম্পর্কে আমার পূর্ব ধারণাটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। দুর্মূখেরা বলে থাকেন তিনি না কি ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তারা যে কত মিথ্যা কথা বলেন, এই সুরচিত লেখাটাই তার প্রমাণ।

আরেকটি চিন্তা আমার মাথায় এসে ভর করেছে। আসলে চিন্তা নয়, তিনি একটি জিনিস জাতির কাছে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। দেশে চলমান যুদ্ধপরাধী ট্রাইবুনাল সম্পর্কে তাঁর অভিমত। আগে অনেকেই এটা নিয়ে ফিসফাস করতেন, তিনি আর সে সুযোগ দিতে চাইলেন না। তিনি এই কলামের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন তিনি যুদ্ধপরাধীদের বিচার চান না, তিনি গোলাম আযম, নিজামী, সাইদী, বাচ্চু, সাকা চৌধুরী গংদের বিচার চান না-  মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হায়েনাদের ভূমিকা যতোই অপরাধমূলক হোক। অসংখ্য ধন্যবাদ বেগম খালেদা জিয়া, আপনার মনের কথাটি এতো সুন্দরভাবে অকপটে বলার জন্য। আমার একটি পূর্ব ধারণা ছিলো, বিএনপির জন্ম জলপাই উর্দি থেকে হলেও, বিরোধীরা তাদেরকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি না বললেও- বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নয়। আমার এই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্যও খালেদা জিয়ার ধন্যবাদ প্রাপ্য।

ওহ হো! আরেকটি ভ্রান্ত ধারণার অবসান করেছেন খালেদা জিয়া। ৮৬- এর নির্বাচনে অংশগ্রহন না করে যে আপোষহীন ভাবমূর্তি তিনি গড়ে তুলেছিলেন, ১৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন দিয়ে (এরপর নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে) যে ভাবমূর্তিকে তিনি আরো বাড়িয়ে নিয়েছিলেন, সামরিক শক্তি সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিদেশে না গিয়ে যেটাকে তিনি এভারেষ্টসম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ভাবমূর্তি যে নিছকই একটা মিথ- সেটা তিনি এই খোলা চিঠিই বলেন আর কলামই বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন। আমরা এখন আশায় আশায় আছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা বিশ্ব তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় এগিয়ে আসবেন এবং বাংলার আপোষহীন নেত্রীকে আবার আপোষহীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

এই বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।

(২)                              

পুরানো একটি ব্যাপার নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। প্রসঙ্গ- বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি। আমি ফেসবুকে একটি স্টাটাস দিয়েছিলাম, সেটিই এখানে আবার দিচ্ছি (শুধুমাত্র রেকর্ড থাকার জন্য)-

আজ সারাদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। দিনের ক্লান্তি শেষে রুমে এসে কিছুক্ষন আগে যখন ল্যাপটপ খুলে বসলাম– আমি বাকরুদ্ধ, শিহরিত, আনন্দিত…!

জন্মেছি আমি অনেক পরে। ৭১ এর যুদ্ধ আমি দেখিনি। যে সময়টা পাঠ্য পুস্তকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পড়ার কথা, সঠিক ইতিহাসটা তখন জানি নি। রাষ্ট্রযন্ত্রে শুনেছি অনেক অপপ্রচার। কিন্তু একজন মানুষ আমাকে ইতিহাসের পাঠ দিয়েছেন- সঠিক এবং সম্পূর্ণভাবে এবং প্রচন্ড আবেগ নিয়ে- তিনি আমার বাবা। সেই থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর রাজাকার আমার দুইটি চরম ঘৃনার জন্তু।

৯১- এ রাজনীতির কিছুই বুঝতাম না, ক্লাস সিক্সে বোধহয় পড়তাম। মনে আছে, তারপরও পাড়ায় পাড়ায় নৌকা নৌকা বলে চেঁচিয়েছি- এই আশায় যে নৌকা ক্ষমতায় গেলে বিটিভিতে “শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠ” গানটি শুনতে পাবো, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হবে, পাকিস্তান আমাদের কাছে ক্ষমা চাইবে আর গোলাম আযমের (ছোট ছিলাম বলে তখনো নিজামী, সাইদী গংদের সম্পর্কে কম জানতাম) ফাঁসি দেখবো। সেই বছর আমার আশা পূর্ণ হয়নি!

৯৬-এ আমার প্রথম আশা পূর্ণ হলো। আর আওয়ামী লীগের এবারের শাসনামলের অনেক কাজ নিয়ে আমি সংক্ষুদ্ধ, বিক্ষুদ্ধ, আশাহত হলেও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হওয়াটা ছিলো আমার জন্য চরম পাওয়া।

আর আজ?

পৃথিবীবাসীকে আমি জোর গলায় বলতে পারবো আমরা যত বছরই হোক, রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের কখনো ক্ষমা করিনি, করতে পারি না। আমার সন্তানকে আমি বলতে পারবো- আমরা যেমন জাতির জনকের হত্যাকারী কুলাঙ্গারদের ফাসিতে ঝুলিয়েছি, ঠিক তেমনি জাতির বেইমান রাজাকার গোলাম আযম, নিজামী, সাইদী, সাকা, বাচ্চু গংদেরও ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা করেছি। শুধু একটি কষ্টই আমার রইলো- আমার ইতিহাস পাঠের প্রথম শিক্ষক, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা সেটা দেখে যেতে পারলেন না। 

আমার এখন আর দুইটি ইচ্ছাই আছে- আমি সবগুলোর ফাঁসি দেখে যেতে চাই, আর দেখতে চাই- পাকিস্তান আমাদের কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাচ্ছে।

(৩)

এবার একটু রাজনীতির বাইরে যেতে হচ্ছে, ইদানীং একটি গান নিয়ে খুব আলোচনা শুনতে পাচ্ছি। যদিও অনেক দেরীতে আমি গানটির ভিডিও দেখেছি এবং শুনেছি।

গানটি হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা ও সুর করা (যদিও মূল সুরটি শিলাইদহের ডাকপিয়ন গগন হরকরার একটি গান থেকে নেওয়া) “আমার সোনার বাংলা” ।

যেহেতু এটি রবীন্দ্রনাথের লেখা, তারমানে এটি একটি রবীন্দ্রসংগীত। এই গানটির আরো একটি বিশেষ পরিচয় আছে। সেটা হচ্ছে এটি আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

এই গানটি সাম্প্রতিককালে একটি ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যান্ড দল “ক্ষ” আধুনিক যন্ত্রসহ গেয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেছে। বিতর্কের সূত্র এরপর থেকেই।

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা বাজানো বা শোনা নিয়ে একটি আইন আছে, যা ‘জাতীয় সঙ্গীত বিধিমালা’১৯৭৮ নামে পরিচিত। এছাড়াও  বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় প্রতীক অবমাননা (সংশোধনী) আইন ২০১০- নামেও একটি খসড়া আছে। তদুপরি, বেশ কিছুদিন আগেই মোবাইল ফোনে জাতীয় সংগীত রিং টোন হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের উদাহরণও আছে। তাই আমার কাছে মনে হয় জাতীয় সংগীত ব্যাপারটি একটি প্রচন্ড স্পর্শকাতর বিষয়। তাই এটা নিয়ে কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই ভালো এবং অনুচিত (এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে)।

‘ক্ষ’ অবশ্য তাদের গানের কোথাও এটা বলেনি যে তারা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাচ্ছে। মিউজিক ভিডিওতে লেখা ছিলো- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’।

তাই আমি ধরে নিচ্ছি এটি তারা রবীন্দ্র সংগীত হিসেবেই গেয়েছে। আর যেহেতু গানটিতে অংশগ্রহনকারী কেউই বাংলাদেশের নাগরিক নয় (বোধহয় দুইজন আছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত), এবং দৃশ্যায়নও বাংলাদেশে হয় নি, আমার কাছে মনে হচ্ছে জাতীয় সংগীত সংক্রান্ত আইনগুলো এই গানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উপরন্ত, গানটি শুরু হয়েছে দ্বিতীয় প্যারা থেকে। আমি যতদূর জানি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের মেধাসত্ত্ব বিষয়টি বোধহয় মেয়াদ পেরিয়ে গেছে (আমার জানায় ভুল থাকতে পারে, কেউ সঠিকটি জানালে বাধিত হবো), তাই কেউ যদি রবীন্দ্র সংগীত ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন উপস্থাপনায় পরিবেশন করতে পারে, তাহলে ক্ষতি কি!

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের জাতীয় সংগীতের সুরটিও কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের করা আসল সুর নয়

আমার কাছে তাই মনে হয়েছে- ‘ক্ষ’ এর গাওয়া গানটিকে খুব একটা ধর্তব্যের মধ্যে আনা উচিত হবে না। কারণ, ওদের গাওয়া গানটিকে আমি জাতীয় সংগীত হিসেবে বিবেচনাই করছি না। আর রবীন্দ্র সংগীত হিসেবে বিবেচনা করলে সোহিনী আলমের গাওয়াটা খারাপ লাগেনি, যেমন খারাপ লাগেনি কম্পোজিশনটাও।

এই লজ্জা রাখি কোথায়? (প্রসংঙ্গঃ ইন্টার্নী ডাক্তারদের গ্রামে এক বছর ইন্টার্নী করতে হবে)

সরকারের প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে ডাক্তার সমাজে বিশেষ করে ভবিষ্যত ইন্টার্নী ডাক্তারদের মধ্যে তুমুল আলোচনা চলছে। তাদের আলোচনার বিষয় প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যনীতির একটি প্রস্তাব নিয়ে, যেটাতে বলা হয়েছে ইন্টার্নী ডাক্তাররা পাঁচ বছরের শিক্ষা শেষ করে আরো দুই বছর ইন্টার্নী করবে, প্রথম এক বছর নিজ শিক্ষা প্রতিস্ঠানে, পরবর্তী বছর গ্রামে গিয়ে। এবং শুধুমাত্র তারপরই একজন ইন্টার্নী ডাক্তার BM & DC-এর সনদপত্র পাবে। আমাদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থানে প্রস্তাবটি কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

আমি এই আলোচনায় কোনো সংখ্যাগত পরিসংখ্যানে যাবো না বা গুরুগম্ভীর আলোচনাও করতে চাইনা, একজন ডাক্তার হিসেবে নিজের কিছু অনুভূতির কথা বলতে চাচ্ছি।

আমি যখন ক্লাস সিক্স/সেভেনে পড়তাম, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় যারা মেধাতালিকায় স্থান পেতো, পত্র-পত্রিকায় তাদের অধিকাংশই বলতো ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে, মানবসেবা করবে। সেই সময় এই ডাক্তার হতে চাওয়ার একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছিলো, কেনো তা জানি না। তখনো আমি ডাক্তার হতে চাইনি।

যখন আরেকটু বড় হলাম, অনেককে বলতে শুনতাম বাংলাদেশের ডাক্তাররা কিছুই জানে না, তারা একেকজন এক একটা কসাই। একটু অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য দেশের ডাক্তারদের উপর নির্ভর না করে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যেতো। তখনো আমি ডাক্তার হতে চাইনি।

আমার এইচএসসি-এর সময় আমার মায়ের যখন ক্যান্সার ধরা পড়লো এবং ডাক্তাররা যখন বললো উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে তখনো আমি ডাক্তার হতে চাইনি।

এরপরও আমাকে মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়েছে আমার কালো গাউন পরার স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আমরা কেউ ভর্তি হলাম মেডিকেলে, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ, আবার কেউবা অন্য বিষয়ে। আমি যখন মেডিকেলে ভর্তি হলাম তখন নিয়ম ছিলো ইন্টার্নী হবে এক বছরের, ছয় মাস মেডিসিনে আর ছয় মাস সার্জারী অথবা গাইনীতে এবং ইন্টার্নী শেষে পোস্টগ্রাজুয়েশন-এর জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং-এর ছয় মাস গননা করা হবে। আমাদের ইন্টার্নী শুরু হতে হতে নিয়ম হয়ে গেলো ইন্টার্নী হবে এক বছরের কিন্তু সবাইকে চার মাস করে মেডিসিন, সার্জারী এবং গাইনী করতে হবে আর এই ইন্টার্নশীপ সময় পোস্টগ্রাজুয়েশন-এর জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং হিসেবে গন্য হবে না।

যেহেতু বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম, বাবার লাখ লাখ টাকা খরচ করে পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষে মাসিক মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বেতনে ইন্টার্নী শুরু করলাম। (সরকারী মেডিকেলে লাখ লাখ টাকা খরচ না হলেও সেটা যে খুব যৎসামান্য তাও নয়।) মনে আছে, ইন্টার্নীর সময় আমাদের ব্যাচের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা একটি ম্যাগাজিন বের করবো, এ্যাডের জন্য ঢাকার সিটিসেল অফিসে গিয়ে স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা, এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে আছে। অফিস শেষে দেখলাম নিজের প্রাইভেট কারে উঠে আমাকে বলছে কোথায় যাবি, লিফট দিতে পারি।

আমি হয়তোবা ভালো ছাত্র ছিলাম, তাই ইন্টার্নীসহ ছয় বছরের মধ্যেই নামের শেষে এমবিবিএস শব্দটা বসাতে পেরেছিলাম। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ সে সুযোগ পেলোনা, তাদের প্রতীক্ষার প্রহর আরো বাড়লো। ইন্টার্নী শেষ করে শুনতে পেলাম, আগে ছিলাম খালে, এবার এসে পড়েছি মহাসমুদ্রে। কারো কাছে এমবিবিএসের কোনো মূল্য নাই, মূল্য পেতে চাই নামের সাথে আরো কিছু শব্দ। ঢাকাতে হাসপাতালগুলোতে চাকরী করতে এসে দেখি বেতন বার/তের হাজার টাকার বেশী না। কেউ কেউ বলবেন ডাক্তারতো হয়েছি মানবসেবার জন্য, টাকার জন্য নয়। মানবসেবা?

মানবসেবা শব্দটাই আমার কাছে এখন হাস্যকর লাগে। আমার চাকরীজীবন শুরু হয়েছিলো ঢাকার একটি নামকরা হাসপাতাল দিয়ে (সঙ্গত কারণেই নামটা বলছি না)। আমি সেখানে ডাক্তার ছিলাম না কেরানী পদে ছিলাম, তা নিয়ে আমার এখনো সন্দেহ আছে। জ্বরের জন্য একটা প্যারাসিটামল দিতে হলেও আমাকে সিনিয়র কোনো ডাক্তারকে আগে জানাতে হবে, মনে হচ্ছিল ছয়টা বছর বৃথাই ডাক্তারী পড়েছি। একবার এক বড় মাপের ব্যক্তির (ঢাকার নির্বাচিত এক সাবেক মেয়র) বড় ছেলে তার বাবা কেনো অন্যান্ন দিনের চাইতে আজ বেশী তন্দ্রাচ্ছন্ন, কি কি ওষুধ পাচ্ছে তার একটা লিস্ট আমি কেনো কনস্যাল্ট্যান্টের অনুমতি ছাড়া দিতে পারবো না সেজন্য আমার চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে ফেললো। আরেকজন ব্যক্তি (ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টরের স্বামী)কেনো আমি তার রোগীনী স্ত্রীকে জ্বর ক’বার এসেছে জিজ্ঞেস করেছি বলে আমার চাকরিই শেষ করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছিলো, ঠিক একই সময়ে যখন দেখি আমার ম্যাজিস্ট্রেট বন্ধুর পিছনে বহু লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে, যখন দেখি আমার আর্মির কর্নেল বন্ধুর বিশাল সুযোগ সুবিধা, যখন দেখি আমার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু বিশাল ব্যবসা করছে, তখন আমার কবরবাসিনী মায়ের উপর প্রচন্ড অভিমান হয়, তাঁর ইচ্ছার জন্যই যে এই পেশায় আসতে হলো।

এই সময় আমার এক সিনিয়র ভাইয়া বিসিএস পরীক্ষায় চান্স পেয়ে থানাতে পোস্টিং পেলো।(বাংলাদেশে না কি রোগী অনুপাতে ডাক্তার কম, গ্রাম বা থানা পর্যায়ে আরো কম, তাহলে আমি একটা জিনিস বুঝি না একজন ডাক্তারকে ছয় বছর সেই বিষয়ে পড়াশোনা করার পর কেনো তাকে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া লাগবে? এমনিতেই কি সে সরকারী চাকরী পাবার যোগ্য নয়?) তাঁর কাছ হতে শুনতে পারলাম সে তাঁর থানায় মাসে দুই একবার যায়। প্রথম দিকে সে থানা হেলথ কমপ্লেক্সে বসে রোগী দেখতো, প্রাইভেটলি নয়, ফলাফল থানায় থাকতে না পারা।

আমি লিখতে বসেছি ইন্টার্নী ডাক্তারদের সময়সীমা দুই বছর করা নিয়ে (তন্মধ্যে গ্রামে এক বছর), অথচ সেখানে আমার কাসুন্দী গেয়ে যাচ্ছি, আমার আসলে নির্ধারিত আলোচনায় আসা উচিৎ।

আমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে ইন্টার্নীশীপ দুই বছর কেনো? কেনো একজন ডাক্তারকে সাত বছর সময় ব্যয় করতে হবে শুধুমাত্র এমবিবিএসের জন্য যে ডিগ্রীর কোনো দামই নেই এখন? বাংলাদেশে সবচেয়ে recognised postgraduation degree হচ্ছে FCPS, MS আর MD। আমরা ডাক্তাররাই জানি এই ডিগ্রীগুলো পেতে কত বছর সময় লাগে। এমনিতেই ডাক্তারী পেশায় আজীবন পড়াশোনার মধ্যেই থাকতে হয়, তারপরও অফিসিয়ালী যদি পনের/বিশ বছর লেগে যায়, সে ডাক্তার তথাকথিত মানবসেবা কখন করবে? যেখানে তার অন্যান্ন পেশার বন্ধুরা ভালো অবস্থায় আছে।

ইন্টার্নীদের গ্রামে কেনো এক বছর করতে হবে? আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা যাদেরকে ভোট দিয়ে সংসদে বা সরকারে পাঠাই, তাঁরা হয় কিছুই বুঝেন না বা না বোঝার ভান করেন। একটা complete health system-এ শুধুমাত্র একজন এমবিবিএস ডাক্তার নয়, আরো কয়েকজনের উপস্থিতির প্রয়োজন আছে। According to WHO প্রতি একজন এমবিবিএস ডাক্তারের কাজে সাহায্য করার জন্য প্রায় ৯ প্যারামেডিক বা প্যারা প্রফেশনাল ক্যাডারের লোক লাগে, যেমন, নার্স, প্যারামেডিক্স , ল্যাবরেটরি কিংবা হেলথ এসিস্টেন্ট ইত্যাদি। সর্বোপরি একুইপমেন্টাল সাপোর্ট। গ্রামে বা থানা (এমনকি জেলা) পর্যায়ে এই ধরনের সম্পূর্ণ সাপোর্ট কি আছে? একজন ইন্টার্ন ডাক্তার মানে সে শিখছে। গ্রামে সে কার কাছ হতে শিখবে? তাকে গাইড করবে কে? একজন ইন্টার্নীকে উপযুক্ত গাইড ছাড়া গ্রামে পাঠানো তো গ্রামের লোকদের সাথেই প্রতারণা করা। আমাদের সরকার পারছে না তার নিয়োগকৃ্ত সরকারী ডাক্তারদেরই গ্রামে রাখতে, সে সরকার কিভাবে আশা করে একজন ইন্টার্নীকে গ্রামে রাখবে? (সরকারী মেডিকেল কলেজের ব্যপারে না হয় বলা যায়, কিন্তু বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে?) গ্রামে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে, ঠিক আছে, কিন্তু যেখানে আমরা পারছি না এডহকের মাধ্যমে নিয়োগকৃ্ত প্রায় পাঁচ হাজার ডাক্তারের গ্রামে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে (মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর উপুর্যুপরি হুমকী সত্ত্বেও), সেখানে ইন্টার্নী ডাক্তার নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। গ্রামে চিকিৎসা সেবা ছড়িয়ে দিতে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সাথে প্রতারণা করছি শিক্ষানবীশ ডাক্তারকে গ্রামে যেতে বাধ্য করে। বাকী যে ৯ ক্যাটাগরির লোক লাগবে তাদের ব্যাপারে আমাদের সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কোনো চিন্তা নেই! হায় সেলুকাস! কি বিচিত্র এই দেশের মাথামোটা ব্যক্তিসমৃদ্ধ সরকার!

গ্রামে ইন্টার্নী না করলে সনদ না দেবার ভয় দেখানো হচ্ছে, খুবই অবাক হচ্ছি, সাথে আতংকিতও হচ্ছি। এই ছেলে মেয়েগুলো গ্রামে থাকবে কোথায়, খাবে কোথায়, শোবে কোথায়, নিরাপত্তা দেবে কে-কোনো কিছুরই আমরা সুস্ঠু সমাধান না দিয়ে স্বাস্থ্যনীতির খসড়া করে বসে আছি।

আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে ঢাকা কেন্দ্রিক। একে বিকেন্দ্রীকরন করতে হলে কিছু যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো গাইড (নিদেনপক্ষে কনস্যাল্ট্যান্ট লেবেলের কোনো ডাক্তার) ছাড়া, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ছাড়া, প্রয়োজনীয় লোকবল ছাড়া এবং সুগঠিত অবকাঠামো ছাড়া ইন্টার্নী ডাক্তারদের গ্রামে পাঠানোর মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক হাততালি হয়তোবা পাওয়া যাবে, কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরন আর হবে না। স্বাধীনতার চল্লিশ বছরেও সরকারী ডাক্তারদের গ্রামে না পাঠাতে পেরে আমরা এখন ইন্টার্নী ডাক্তারদের উপযুক্ত প্রস্তুতি না নিয়ে মহাসমুদ্রে না, মহাবিশ্বে ফেলে দিচ্ছি। এই লজ্জা রাখি কোথায়?