অনেক অনেক বছর আগে, এখন যাকে আমরা রাশিয়া বলে জানি, সেখানে এক রাজা এবং রানী ছিলেন। তখন রাশিয়ার রাজাকে বলা হতো জার। সেই জারের ছিলো এক ছেলে এবং তিন সুন্দরী মেয়ে। ছেলের নাম ছিলো প্রিন্স ইভান আর মেয়েদের নাম ছিলো মারিয়া, ওলগা ও অ্যানা। একদিন জারের দুয়ারে মৃত্যুরাজ এসে দাঁড়ালে জার প্রিন্স ইভানকে কাছে ডাকলেন। বললেন, “আমার যাবার সময় হয়ে গেছে। আমার পর তুমিই হবে এই বিশাল দেশের জার। রাজ্য শাসন নিয়ে তোমাকে কিছু বলবো না, তুমি তা ভালোই জানো। তোমাকে শুধু বলে যাচ্ছি, তুমি তোমার বোনদের প্রতি খেয়াল রেখো। যখনই কেউ এসে তোমার বোনদের বিয়ে করতে চাইবে, তুমি অমত কোরো না।”
জার মারা যাবার পর ইভান তার তিন বোনকে নিয়ে একদিন প্রাসাদের বাগানে ঘুরছিলেন। হঠাৎ করে পুরো আকাশ জুড়ে মেঘ করলো, মুহূর্তেই আশপাশ অন্ধকারে ঢেকে গেলো। ভীষন বজ্রপাত হওয়া শুরু করলো। ইভান তার বোনদের দ্রুত প্রাসাদে চলে যেতে বললো। সবাই প্রাসাদে প্রবেশ করা মাত্রই দূর আকাশ থেকে এক বিশাল ফালকন পাখি মুখ থুবড়ে প্রাসাদে এসে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে সেই ফালকনটি একজন সুদর্শন যুবকে পরিণত হলো। ফালকনটি প্রিন্স ইভানকে বলল, “এর আগে আমি তোমার এখানে মেহমান হিসেবে এসেছিলাম। এবার এসেছি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আমি তোমার বোন মারিয়াকে বিয়ে করতে চাই।” ইভানের তার বাবার শেষ কথা মনে পড়ে গেলো, মারিয়াও সুন্দর চেহারা দেখে ফালকনকে ভালোবেসে ফেললো। ফালকনটি মারিয়াকে বিয়ে করে নিজের দেশে নিয়ে গেলো।

চিত্র ১: ফালকনটি মারিয়াকে বিয়ে করতে চাইলো
এক বছর পর। ইভান তার দুই বোন নিয়ে প্রাসাদের বাগানে সান্ধ্য ভ্রমন করছিলো। ঠিক সেই সময়ে সেই এক বছর আগেকার মতো সমস্ত আকাশ মেঘে ঢেকে গেলো, মুহূর্তেই আশপাশ অন্ধকারে ঢেকে গেলো। ভীষন বজ্রপাত হওয়া শুরু করলো। সবাই প্রাসাদে প্রবেশ করা মাত্রই দূর আকাশ থেকে এক বিশাল ঈগল পাখি মুখ থুবড়ে প্রাসাদে এসে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে সেই ঈগলটি আগের ঘটনার মতোই একজন সুদর্শন যুবকে পরিণত হলো। সে এবার ওলগাকে বিয়ে করতে চাইলো। ইভান এবং ওলগা রাজী হওয়াতে ঈগলটি ওলগাকে বিয়ে করে নিজের দেশে নিয়ে গেলো।
আরো এক বছর পর। একদিন সন্ধ্যা বেলা ইভান তার ছোট বোন অ্যানাকে নিয়ে প্রাসাদের বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছিলো। ঠিক সেই সময়ে আগের দুই বছরের মতোই হঠাৎ করে সমস্ত আকাশ মেঘে ঢেকে গেলো, মুহূর্তেই আশপাশ অন্ধকারে ঢেকে গেলো। ভীষন বজ্রপাত হওয়া শুরু করলো। ওরা দুইজনই প্রাসাদে প্রবেশ করা মাত্রই দূর আকাশ থেকে এবার এক রাভেন (সামুদ্রিক পাখি) মুখ থুবড়ে প্রাসাদে এসে পড়া মাত্রই একজন সুদর্শন যুবকে পরিণত হলো এবং অ্যানাকে বিয়ে করে নিজের দেশে নিয়ে গেলো।
এবার ইভান খুব একা হয়ে গেলো। বিশাল প্রাসাদে একা থাকতে থাকতে তার খুব অসহ্য লাগছিলো। সবসময় তার বোনদের কথা মনে পড়তো। এক সময় আর থাকতে না পেরে তার সভাসদদের ডেকে বললো, “আমি অনেক দিনের জন্য বাইরে ভ্রমনে যাচ্ছি। কবে আসবো জানি না। বোনদেরও দেখার খুব ইচ্ছে। এই সময়টা তোমরাই দেশটাকে শাসন করো। আমি আগামীকাল ভোরেই বের হবো।”
ইভান একা একা রাজ্য থেকে বের হলো, ঘুরতে ঘুরতে এক বিশাল মাঠে চলে এলো। সেই মাঠে ছড়ানো ছিটানো অনেক সৈন্যের মৃতদেহ দেখে সে চমকে উঠলো। চিৎকার করে বললো, “কেউ কি বেঁচে আছে?” লাশের ভিতর থেকে এক অর্ধমৃত সৈনিক ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠলো, “পাশের দেশের সুন্দরী রানী মারিয়া মোরেভনা যুদ্ধে আমাদের পরাজিত করেছে। সে এখন মাঠের অন্য প্রান্তে সাদা তাঁবুতে বিশ্রাম নিচ্ছে।”

চিত্র ২ : সেই মাঠে ছড়ানো ছিটানো অনেক সৈন্যের মৃতদেহ দেখে সে চমকে উঠলো
ইভান মাঠের অন্য প্রান্তের সাদা তাঁবুর কাছে গেলো। সুন্দরী রানী মারিয়া মোরেভনাকে দেখে ইভান কোনো কথাই বলতে পারলো না। হেসে ফেলে রানী জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কে গো? কি চাও এখানে?” ইভান যেন মোহমুগ্ধের মতো বলে যাচ্ছে, “আমি ইভান। রাশিয়ার জার। এখানে আমি যুদ্ধের জন্য আসেনি, এসেছি শান্তির বার্তা নিয়ে।” রানী মারিয়া ইভানকে বললো, “ঠিক আছে, তুমি তাহলে বিশ্রাম করো।”

চিত্র ৩ : সুন্দরী রানী মারিয়া মোরেভনাকে দেখে ইভান কোনো কথাই বলতে পারলো না
ইভান তিনদিন তিনরাত বিশ্রাম নিলো। সে রানী মারিয়ার প্রেমে পড়ে গেলো, রানী মারিয়াও এই তিনদিনে ইভানকে ভালোবেসে ফেললো। অবশেষে তারা বিয়ে করে মারিয়ার দেশে ফিরে গেলো।
বেশ কিছুদিন পর রানী মারিয়া আরেকটি যুদ্ধ করার জন্য অন্য এক দেশে চলে গেলো। যাওয়ার আগে ইভানকে বলে গেলো, “আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। এই সময়টুকু দেশের শাসনভার তোমার উপর দিয়ে গেলাম। তুমি যে কোনো কিছু করতে পারবে, শুধুমাত্র এই প্রাসাদের সবচেয়ে উঁচু গম্বুজের বন্ধ করা রুমে কখনো ঢুকো না।” মানুষের মন সবসময়ই নিষেধকে অমান্য করতে চায়। মারিয়া চলে যাবার কিছুদিন পরেই ইভান সেই রুমে ঢুকলো।
রুমে ঢুকেই এক দৈত্যকে দেখতে পেলো। সেই দৈত্য আবার সাতটা লোহার শিকল দিয়ে আটকানো, অসম্ভব দুর্বল হয়ে আছে। দৈত্যটি ইভানকে দেখে কাতর কন্ঠে বললো, “আমি দশ বছর ধরে না খেয়ে আছি। আমাকে একটু পানি খাওয়াবে?” দয়াপরবশ হয়ে ইভান দৈত্যটিকে তিন গামলা পানি খাওয়ালো। শেষ গামলা পানি খেয়েই দৈত্যটি লোহার শিকলগুলোকে টান দিয়ে ছিড়ে ফেললো, শরীরে যেনো সে প্রবল শক্তি ফিরে পেলো। আর পাবেই না কেনো? সেতো যে সে দৈত্য নয়, সে হচ্ছে কসচেই দ্য ডেথলেস (Koschei the Deathless- এক ভয়ংকর দৈত্য, যে শুধু সুন্দরী অল্প বয়ষ্ক মেয়েদেরই ক্ষতি করে)! লোহার শিকল থেকে মুক্ত হয়েই সে ঝড়ো হাওয়ার মতো গম্বুজের জানালা দিয়ে উড়ে গেলো, যাবার সময় ইভানকে বলে গেলো, “তুমি আর কখনোই তোমার প্রিয়তমা মারিয়াকে দেখতে পাবে না!” কসচেই পথেই মারিয়াকে পেয়ে গেলো, মারিয়া তখন যুদ্ধ শেষে প্রাসাদে ফেরত আসছে। কসচেই সেখান থেকেই মারিয়াকে বন্দী করে নিজের প্রাসাদে নিয়ে গেলো।

চিত্র ৪ : ভয়ংকর দৈত্য কসচেই দ্য ডেথলেস
ইভান তার বোকামির জন্য অনুশোচনায় পুড়তে লাগলো, একই সাথে মারিয়ার শোকও ভুলতে পারলো না। অনেকদিন যখন পেরিয়ে গেলো, তখনো যখন ইভান মারিয়াকে ভুলতে পারলো না, ইভান সিদ্ধান্ত নিলো সে মারিয়াকে উদ্ধার করতে যাবে।
তিনদিন ঘোড়ায় চড়ার পর বিশাল এক প্রাসাদের কাছে এসে থামলো ইভান। ইভান যখন পাশের ওক গাছের নীচে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসল, তখনই এক বিশাল ফালকন তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সে ইভানের বোন মারিয়ার স্বামী এবং প্রাসাদটি ফালকনের। ফালকন ইভানকে নিয়ে প্রাসাদে গেলো। দুই ভাই বোনের বহুদিন পরে আবার দেখা হলো, দুইজনই দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো। তিনদিন তিনরাত ইভান এখানে থাকলো। যাবার সময় ফালকন আর বোন মারিয়ার অনুরোধে তার সিলভার চামচটি দিয়ে গেলো।
আবার তিনদিন ঘোড়ায় চড়ার পর প্রথমটার চেয়ে আরো বিশাল এক প্রাসাদের কাছে এসে থামলো ইভান। ইভান যখন পাশের ওক গাছের নীচে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসল, তখনই এক বিশাল ঈগল তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সে ইভানের বোন ওলগার স্বামী এবং প্রাসাদটি ঈগলের। ঈগল ইভানকে নিয়ে প্রাসাদে গেলো। দুই ভাই বোনের বহুদিন পরে আবার দেখা হলো, দুইজনই দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো। তিনদিন তিনরাত ইভান এখানে থাকলো। যাবার সময় ঈগল আর বোন ওলগার অনুরোধে তার সিলভার কাঁটা চামচটি দিয়ে গেলো।
আবার তিনদিন ঘোড়ায় চড়ার পর প্রথম দুইটার চেয়ে আরো বিশাল এক প্রাসাদের কাছে এসে থামলো ইভান। ইভান যখন পাশের ওক গাছের নীচে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসল, তখনই এক বিশাল রাভেন তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সে ইভানের বোন অ্যানার স্বামী এবং প্রাসাদটি রাভেনের। রাভেন ইভানকে নিয়ে প্রাসাদে গেলো। দুই ভাই বোনের বহুদিন পরে আবার দেখা হলো, দুইজনই দুইজনকে জড়িয়ে ধরলো। তিনদিন তিনরাত ইভান এখানে থাকলো। যাবার সময় রাভেন আর বোন অ্যানার অনুরোধে তার সিলভার তামাক বাক্সটি দিয়ে গেলো।
আরো তিনদিন ঘোড়ায় চড়ার পর অবশেষে ইভান কসচেই-এর প্রাসাদে আসলো। ভয়-ডরহীন ইভান সোজা প্রাসাদের ভিতরে ঢুকেই রানী মারিয়াকে দেখতে পেলো। কসচেই তখন শিকারের জন্য বাইরে গেছে। ইভান মারিয়াকে নিয়ে ঘোড়ায় করে দ্রুত সরে যেতে লাগলো। কিন্তু কসচেই প্রাসাদে ফিরে তার এক ঘোড়ার কাছ হতে মারিয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে দ্রুত এক জাদুকরী ঘোড়ার সাহায্যে এক নিমিষেই ইভান আর মারিয়াকে ধরে ফেলে। সে ইভানকে বললো, “তুমি আমার উপর দয়া দেখিয়েছিলে, তাই তোমাকে হত্যা করলাম না।”

চিত্র ৫ : ইভান মারিয়াকে নিয়ে ঘোড়ায় করে দ্রুত সরে যেতে লাগলো
পরাজিত, বিধ্বস্ত ইভান দ্বিতীয় দিনও আবার প্রাসাদে গিয়ে মারিয়াকে নিয়ে ঘোড়ায় করে দ্রুত সরে যেতে লাগলো। কিন্তু কসচেই প্রাসাদে ফিরে তার এক ঘোড়ার কাছ হতে মারিয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে দ্রুত এক জাদুকরী ঘোড়ার সাহায্যে এক নিমিষেই ইভান আর মারিয়াকে ধরে ফেলে। সে ইভানকে বললো, “আবার যদি তুমি একই কাজ করো, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করবো।” কিন্তু পরাজিত, বিধ্বস্ত ইভান মারিয়াকে কোনোমতেই ভুলতে না পেরে তৃতীয় দিনও আবার প্রাসাদে গিয়ে মারিয়াকে নিয়ে ঘোড়ায় করে দ্রুত সরে যেতে চাইলো। কিন্তু এবার মারিয়া যেতে চাইলো না। সে বললো, “কসচেই এবার তোমাকে ধরলে মেরে ফেলবে।” “তোমাকে ছাড়া বাঁচার চাইতে সেটাও অনেক ভালো,” ইভানের এই উত্তর শুনে মারিয়া আর ‘না’ করতে পারলো না, ইভান মারিয়াকে নিয়ে ঘোড়ায় করে দ্রুত সরে যেতে লাগলো। কিন্তু কসচেই প্রাসাদে ফিরে আগের দুইবারের মতোই তার এক ঘোড়ার কাছ হতে মারিয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে দ্রুত এক জাদুকরী ঘোড়ার সাহায্যে এক নিমিষেই ইভান আর মারিয়াকে ধরে ফেললো। এবার দৈত্যটি ইভানকে খুন করে টুকরো টুকরো করে এক ব্যারেলের মধ্যে ঢুকিয়ে গভীর নীল সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলো।
কসচেই যখন ইভানকে হত্যা করে তখন সিলভার চামচ, সিলভার কাঁটা চামচ আর সিলভার তামাক বাক্সের রং পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে ইভানের তিন বোনের স্বামীরা বুঝতে পারে ইভানের কোনো বড় বিপদ হয়েছে। ঈগল নীল সমুদ্রের দিকে যায়, ব্যারেলটিকে তীরে নিয়ে আসে। রাভেন মৃতের পানি নিয়ে এসে ইভানের খণ্ডিত অংশগুলোর উপর ছিটিয়ে দেয়। ফালকন এবার বাঁচার পানি নিয়ে এসে একইভাবে ছিটিয়ে দেয়। ইভান আবার জীবন ফিরে পায়। ইভান তার বোনের স্বামীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আবার কসচেই-এর প্রাসাদের দিকে যাত্রা শুরু করে।
কসচেই যখন প্রাসাদে ছিলো না, ইভান তখন প্রাসাদে ঢুকে মারিয়াকে বললো, “তুমি কসচেই-এর কাছ হতে শুনে রাখবে, সে জাদুকরী ঘোড়াটা কোথা হতে পেয়েছে?” কসচেই যখন প্রাসাদে আসে, মারিয়া প্রেমের অভিনয় করে জানতে চাইলে, খুশি হয়ে কসচেই বলতে থাকে, “আমি এই জাদুকরী ঘোড়া পাই বাবা ইয়াগার কাছ হতে, যে আগুনের নদীর ওপাশে থাকে এবং নদীটি আমি পার হই আমার হাতের এই জাদুকরী রুমালের সাহায্যে।” রাতে কসচেই ঘুমিয়ে পড়লে মারিয়া জাদুকরী হাত রুমালটা চুরি করে ইভানকে দেয়।

চিত্র ৬ : মারিয়া কসচেই-এর সাথে প্রেমের অভিনয় করতে লাগলো
ইভান এবার বাবা ইয়াগার ঘরের দিকে যাত্রা শুরু করলো। আগুনের নদীর তীড়ে এলে ইভান জাদুকরী হাত রুমালটি দেখালে একটা ক্রিস্টাল ব্রিজ নদীর নীচ থেকে উপরে উঠে আসে, এবং ইভান সহজেই নদী পেরিয়ে যায়। বেশকিছুক্ষণ হাঁটার পর ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ইভান এক মা পাখি আর তার বাচ্চাকে দেখে, তাদেরকে মেরে খেতে চাইলো। তখন মা পাখিটি বললো, “আমাদের মেরো না, হয়তোবা আমরা তোমার উপকারে আসতে পারি।”

চিত্র ৭ : মা পাখিটি বললো, “আমাদের মেরো না, হয়তোবা আমরা তোমার উপকারে আসতে পারি”
ইভান না খেয়ে আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। বেশকিছুক্ষণ হাঁটার পর ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ইভান এবার এক সিংহী আর তার শাবককে দেখে তাদেরকে মেরে খেতে চাইলো। তখন সিংহীটি বললো, “আমাদের মেরো না, হয়তোবা আমরা তোমার উপকারে আসতে পারি।” ইভান না খেয়ে আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। আরো বেশকিছুক্ষণ হাঁটার পর চরমভাবে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ইভান এবার এক মৌচাকের দেখা পেয়ে মধু খেতে চাইলো। রানী মৌমাছি তখন বললো, “তুমি মধু খেওনা, হয়তোবা আমরা তোমার উপকারে আসতে পারি।” ইভান না খেয়ে আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। এভাবে সে বাবা ইয়াগার ঘরের কাছে চলে আসলো।
বাবা ইয়াগা ইভানকে দেখে ভালো ভালো খাবার দিলো, আর বললো, “আমার আস্তাবলে ঘোড়াগুলোকে দেখবে, একটাও যদি হারিয়ে যায়, তোমার মাথা কাটবো আমি।” ইভান খাবার খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লো। বাবা ইয়াগা তার ঘোড়াগুলোকে বললো, যখন সকালের খাবার খাওয়া হয়ে যাবে, তখন যেনো ঘোড়াগুলো পালিয়ে যায়।

চিত্র ৮ : বাবা ইয়াগা
ইভান সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ঘোড়াগুলোকে মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গেলো, ওমনি ঘোড়াগুলো পালিয়ে যেতে শুরু করলো। কিন্তু মা পাখি আর তার বাচ্চারা ঠোকর দিয়ে দিয়ে ঘোড়াগুলোকে ফিরিয়ে আনলো। রাতে সব ঘোড়া আস্তাবলে দেখে বাবা ইয়াগা ক্ষেপে গেলো। ঘোড়াদের কাছ হতে ঘটনা শুনে পরের দিন জঙ্গলের দিকে পালাতে বললো। পরদিন সকাল বেলা ইভান ঘুম থেকে উঠে ঘোড়াগুলোকে মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গেলো, ওমনি ঘোড়াগুলো জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যেতে শুরু করলো। কিন্তু সিংহী তার বাচ্চাদের সহ এবং আরো কিছু সিংহীর সাহায্যে হামলা করে ঘোড়াগুলোকে ফিরিয়ে আনলো। রাতে সব ঘোড়া আস্তাবলে দেখে বাবা ইয়াগা আবার ক্ষেপে গেলো। ঘোড়াদের কাছ হতে ঘটনা শুনে পরের দিন গভীর নীল সাগরের দিকে পালাতে বললো। পরদিন সকাল বেলা ইভান ঘুম থেকে উঠে ঘোড়াগুলোকে আবার মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গেলো, ওমনি ঘোড়াগুলো নীল সমুদ্রের দিকে পালিয়ে যেতে শুরু করলো। কিন্তু রানী মৌমাছি তার দলবলসহ হুল ফুটিয়ে ঘোড়াগুলোকে ফিরিয়ে আনলো। রানী মৌমাছি তখন ইভানের কাছে এসে বললো, “তুমি এখনই বাবা ইয়াগার ঘরে ফিরে যাও, কিন্তু বাবা ইয়াগা যেনো বুঝতে না পারে। রাত গভীর হলে আস্তাবলের সবচেয়ে কুৎসিত অল্প বয়স্ক ঘোড়াটা নিয়ে পালিয়ে যাবে।”
ইভান ঠিক তাই করলো, এবং জাদুকরী হাত রুমাল দেখিয়ে আগুনের নদীও পেরিয়ে এলো। ঠিক তখন বাবা ইয়াগা ঘটনা বুঝতে পেরে রাগে ক্ষোভে ইভানের পিছে পিছে ছুটে আসে এবং আগুনের নদী পার হতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। তারপর থেকে আর কেউ কখনো বাবা ইয়াগার নাম শুনেনি।
কিন্তু এদিকে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। ইভান যখন আগুনের নদী পেরিয়ে আসলো, তখনই হঠাৎ করে ইভানের ঘোড়াটা এক শক্তিশালী স্ট্যালিয়নে পরিণত হলো। সেই স্ট্যালিয়নে চড়ে ইভান কসচেই-এর প্রাসাদে এসে মারিয়াকে নিয়ে দ্রুত তাদের রাজ্যের দিকে যাত্রা শুরু করলো। কিন্তু এবারও কসচেই তার এক ঘোড়ার কাছ থেকে খবর পেয়ে জাদুকরী ঘোড়ার সাহায্যে ইভান আর মারিয়াকে প্রায় ধরে ফেললো। তখন ইভানের ঘোড়াটা কসচেই-এর মাথায় আঘাত করে এবং সেই আঘাতেই কসচেই মারা যায়।
মারিয়া কসচেই-এর ঘোড়ায় করে নিজের রাজ্যে ফেরত আসে, পথিমধ্যে ইভানের তিন বোনের স্বামীদের প্রাসাদে কিছুদিন বেড়ায়। ইভান আর মারিয়া এরপর নিজেদের দুই রাজ্য একত্রিত করে এবং আরো অনেক বছর সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।

চিত্র ৯ : ইভান আর মারিয়া আরো অনেক বছর সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে
24.449650
89.706115