( আমার লেখা ‘এ লজ্জা রাখি কোথায় ?’ আমি মুক্তব্লগে পোস্ট করেছিলাম। সেখানে জনৈক জিল্লুর রহমান আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে একটা পোস্ট লিখেছে। আমার এই লেখা সেটার প্রতিবাদ)
আমাকে নিয়ে আপনার খুব সুন্দর লেখাটি আমার কিছুক্ষন আগে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। আমি জানি না আপনি কি করেন তবে ডাক্তারদের নিয়ে যে আপনি চিন্তা করেছেন জেনে খুব খুশি লাগছে।
সঙ্গত কারণেই আপনার লেখার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। তাই কিছু লিখতে চাচ্ছি। আপনি কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত।
১।দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এদেশের গরীব-দূঃখী মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চালিত হয় সুতরাং গ্রামের মানুষের সেবার প্রতি আপনার মানসিকতা আমাকে অবাক করেছে।
—- আমি আমার লেখার কোথাও বলেছি কি না গ্রামের মানুষদের আমরা সেবা করতে চাই না? যদি আপনি দেখাতে পারেন কোথাও এই কথা আমি লিখেছি, আমি ব্লগিং ছেড়ে দিবো। লেখা সম্পূর্ণ না পড়ে, না বুঝে একটা কথা লিখে দিলেই হলো না। আপনি বলেছেন, “পাঁচ বছর যাদের টাকায় লেখাপড়া শিখবেন এক বছর তাদের সেবা করতে আপনার এত আপত্তি কোথায়?” আপনি যদি কথাটি আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলেন, তাহলেও বলবো আপনি আমার লেখা পড়েন নি। আমি পরিষ্কার ভাবে লিখেছিলাম আমি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম, দেশের গরীব-দূঃখী মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আমি পড়েনি, আমি পড়েছি আমার বাবার কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকায়। জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ সরকার থেকে কোনো টাকা পেতো কি না আমি জানি না, তবে আমার ইন্টার্নীর টাকাও দেশের গরীব-দূঃখী মানুষের কাছ হতে পাই নি, পেয়েছি WHO হতে। বলা উচিৎ নয়, এরপরও বলছি, মেডিকেলে পড়তে আমার প্রায় দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, আমার টাকা ফেরত দেওয়া উচিৎ, না কি আমাকে টাকা ফেরত দেওয়া উচিৎ?
২। গ্রামে আপনার শিক্ষাজীবনে শেখাবার ডাক্তার নেই একথাটা পাঠক সাধারনকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন এটা ঠিক না কারণ প্রত্যেক উপজেলা সদরে একজন টি.এইচ.এ এবং কয়েকজন এম.বি.বি.এস ডাক্তার ছাড়াও ইদানিং বিশেষজ্ঞ আছে তাদের কাছে আপনার শেখার অনেক আছে।———- খুবই হাসি পাচ্ছে। বাংলাদেশে গ্রামের কথা বাদ দিলাম, থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কি অবস্থায় আছে সেটা বোধহয় আপনি ছাড়া আর সবাই জানে, অতএব বোকা বানানোর প্রশ্নই আসে না। বরং আপনার লেখা দিয়ে আপনি বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন। আপনি কি জানেন থানা পর্যায়ে কি ঘটে? আপনাকে কিছু নমুনা দিচ্ছি-আমার এক পরিচিত আপুর পোস্টিং হলো কুমিল্লার দেবীদ্বারে।সে প্রথম দিন গিয়ে দেখলো যে সেখানে ব্যবস্থা হচ্ছে রুগী আসলে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি টিকিটে দেখাবেন না প্রেস্ক্রিপ্সন করাবেন?” টিকিট মানে সরকারী ৩ টাকার টিকিট, আর প্রেসক্রিপশন মানে ১০০/২০০ টাকা দিয়ে দেখানো। নিয়ম অনুসারে সরকারী কোন কমপ্লেক্সে টাকা নেয়া ম্যালপ্রাক্সিস এবং অনৈতিক। আপু বললেন, আমি টাকা ছাড়া রুগী দেখবো, যে কাজে আমি এসেছি। ৬ দিন টিকতে পারলেন, ৭ম দিন টিএইচও(অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পোস্ট) আপুকে ডেকে পাঠালেন। সরাসরি বললেন, আপনি সপ্তাহে ১ দিন আসবেন। আপনার রোজ আসার দরকার নেই। বেতন তোলার দিন বেতন তুলে নিবেন। প্রতিদিন যেন আপনাকে না দেখি।
আরেকজন এরকম টাকা নিতে অস্মকৃতি জানানোয় একদিন গিয়ে দেখেন তার রুমে তালা মারা। টিএইচও বললেন, রুমে তালা মারার অর্থ আপনার বুঝা উচিত।
এদের কাছ হতে শিক্ষানবীশ ডাক্তাররা কি শিখবে? আর এই যে এডহকে ৫০০০ ডাক্তার নিলো, কয়জন ডাক্তার গ্রামে আছে? আমার কথাই ছিলো সেই টা, আমরা সরকারী ডাক্তারদের গ্রামে পাঠাতে পারছি না, এখন চাচ্ছি ইন্টার্নী ডাক্তারদের পাঠাতে। আমার প্রতিবাদ ছিলো এই খানে।
৩। মানবসেবা শব্দটাই আমার কাছে এখন হাস্যকর লাগে-এটা ঠিক বলেছেন সেবা যখন কবরেনই না তখন আর সেবকের কৃতিত্ব নিতে চাইবেন কেন?———- এবার একটু কড়া ভাবেই আমি বলতে চাই আপনার লেখা বোঝার কোনো ক্ষমতাই নেই। মানবসেবা আমি করি কি না সেটা আমিই জানি, আপনি নন। আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন? আমি কি করি সে টা আপনাকে বলতে যাওয়াটা আমার বোকামী হবে, শুধু এটুকু বলতে পারি আপনার বোঝার সামর্থ্য নেই কতটুকু কষ্টে এই কথাটা লিখেছিলাম। আপনার উপরোক্ত কথা দ্বারা আবার বোঝা যাচ্ছে আপনি আমার লেখাই পড়েন নি।
৪। ডাক্তাররা যেন গ্রামের হাসপাতালে গিয়ে ঠিকমতো ডিউটি করে সেজন্য ইন্টর্নী কালীন সময় তাদের হাজিরা ইউ.এন.ও দের হাতে দিয়ে তাদের হাতে যেন কিছু মার্ক দেয়া হয় যাতে ডাক্তাররা স্টেশনে থাকতে বাধ্য হয় তা না হলে ইন্টার্নী ডাক্তাররা যাদের তত্বাবধানে থাকবে তারা স্বজনপ্রীতি করবে। ———— হা হা হা…। আপনি আমাকে বলেছেন আমি উন্নত প্রজাতির প্রাণী (মানুষও নই), আর আপনাকে আমি কি বলবো? আপনি কি ভাই ইউ এন ও? কিছু বাড়তি টাকা কামাতে চাচ্ছেন? আমি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।
৫। ডাক্তাদের পড়াশোনার সময় আরো বৃদ্ধি করে হিউম্যান ডেভলাপম্যাণ্ট ট্রেনিং দেয়া উচিত।
————- হ্যাঁ, এখানে আমি আপনার সাথে একমত। তবে আপনার লেখার টোনটা ছিল ব্যাঙ্গাত্নক এবং আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।
৬। ডাক্তারদের উপস্থিতি এবং জনসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক উপজেলায় স্থানীয় সরকার কিংবা ইউ.এন.ওদের সমন্বয়ে কমিটি করা উচিত যাতে তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে (সেবা না দায়িত্ব)।
————— আমি আবারও বলবো আপনি আমার লেখা পড়েননি। আমার লেখার বিষয়বস্তু ছিলো ইন্টার্নী ডাক্তারদের গ্রামে এক বছর ইন্টার্নী করা নিয়ে, ডাক্তারদের ব্যাপারে আমি কিছুই বলি নি। আপনার কথা পুরোপুরি অপ্রাসংগিক।
৭। ডাক্তাররা নিরীহ মানুষদের অযথা অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করে যেন ডায়গোনিস্টিক সেণ্টার থেকে কমিশন না নিতে পারে সেজন্য তদারকি করা দরকার। —————- আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।
৮। অপারেশনে কোন রোগী মারা গেলে তার সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যাসহ তার গাফিলতির জন্য রোগী মারা গেলে তার শাস্তির বিধান থাকা উচিত।—————-আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।
৯। যে কোন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক কোন মামলা করতে গেলে যে সরকারের অনুমতি দরকার এটা ডাক্তারদের বেলায় প্রযোজ্য করা ঠিক হবে না।—————আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।
আপনি আপনার কোনো অভিমত থাকলে আপনি সে টা বলতেই পারেন, কিন্তু আপনি আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে পোষ্টের শিরোনাম দিয়েছেন, যে টা ভদ্রতার কোনো সীমারেখার মধ্যেই পরে না। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং আপনারও নেওয়া উচিৎ।
সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই, কোনো লেখা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে লেখাটা পুরোপুরি পড়ে, এর অর্থ বুঝে তারপরে কলম ধরুন, তার আগে নয়।
আমি সাধারণত কখনোই এভাবে আক্রমনাত্নক লেখা লিখি না, এবার লিখলাম, আপনার লেখাটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে বলে। ভালো থাকুন অবিরত।
24.449650
89.706115