পঞ্চাশতম পোষ্ট এবং এক বছর

আজ থেকে আর দুই দিন পর আমার মুক্তব্লগে এক বছর হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা আমার পঞ্চাশতম পোষ্ট! এক বছরে পঞ্চাশটি পোষ্ট।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে একদিন পত্রিকায় দেখলাম মুক্তব্লগ নামে একটি নতুন ব্লগের নাম। আমি তখন ব্লগ কাকে বলে জানতামই না! খবরটি একবার পড়ে তাই খুব একটা গুরুত্ব দেই নি। বেশ কিছু দিন আমার প্রফেসরের কাছ থেকে ব্লগ সম্পর্কে জানলাম! উনি আমাকে সচলায়তনের কথা বললেন। সচলায়তন দেখে আমার ভালো লাগলো, শিখলাম ব্লগ কাকে বলে! কিন্তু কিছুই লিখতে পারলাম না, বা লেখার সুযোগ পেলাম না। সচলায়তনের রেজিস্ট্রেশনের বিশাল ব্যাপার দেখে আমি হতাশ হয়ে গেলাম। খুব লিখতে ইচ্ছে করছিলো। হঠাৎ করেই আবার মুক্তব্লগের নাম মনে পড়ে গেলো। রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম, দিনটি ছিলো ২৫ জানুয়ারি, ২০১১।

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন করে প্রফেশনাল ব্যস্ততার জন্য আর লিখতে পারলাম না। তাই প্রথম লেখা হলো ১৬ এপ্রিল, ২০১১, বৈশাখের দুই দিন পর। লিখলাম নববর্ষ নিয়েই- “এসো মাতি ভালোবাসার উৎসবে ……”— আমার প্রথম ব্লগ লেখা! সেই থেকে শুরু।

একে একে লিখে ফেললাম ৪৯ টি ব্লগ। রোগীদের নিয়ে, মেডিকেল কলেজ নিয়ে, লিবিয়া ভ্রমন নিয়ে, স্মৃতিচারণ, গল্প, অণুগল্প, কবিতা, রূপকথা, মিথোলজী, ইতিহাসের গল্প, সমসাময়িক ব্যাপার এমন কি ছবি ব্লগও দিলাম। এক সময় দিনের বেশিরভাগ সময়ই আমার চোখ থাকতো মুক্তব্লগের দিকে। অতি আপনজন হয়ে গিয়েছিলো কারিম ভাই, আসলাম ভাই, মুকিত ভাই, দেবুদা, সাইফুল্লাহ খালেদ ভাই, এনজামান ভাই, ফারিয়ারিসতা আপু, নাজমুল আহসান মুক্ত ভাই, নাজিয়া তাসনিম আপু, মুদ্রা ভাই, আরিশ, আরেফিন ভাই, রংধনু ভাই, সোনালী আপু, পুনপুনি আপু, চে গুয়েভারা ভাইসহ আরো অনেকে। প্রতিটি পোস্টে কারিম ভাইয়ের মন্তব্যে মন আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠতো। একবার একজন ব্লগার আমার এক লেখার জন্য শিরোনামে আমার নাম দিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলো। ফারিয়ারিসতা আপু একটি পোষ্ট দিয়ে সেটার প্রতিবাদ করেছিলেন, করেছিলেন আরো অনেকে। আমি অভিভূত হয়েছিলাম আপনাদের সবার আন্তরিক ভালোবাসায়।

সুখ বোধহয় সব সময় সয় না। মাঝে সার্ভার সমস্যার জন্য মুক্তব্লগে প্রবেশ করাই কষ্টকর হয়ে উঠলো। অনেকদিন বিচ্ছিন্ন ছিলাম আমি। কিছুটা যেনো দূরেও সরে এসেছি। সেই সময়ে লেখার তীব্র ইচ্ছে থেকেই আরো কিছু ব্লগের সদস্য হই আমি। লেখা আমার চলে, কিন্তু মন ভরে না। এক সময় সার্ভার সমস্যার সমাধান হলো, কিন্তু আমি হয়ে গেলাম অনিয়মিত। সেই অনিয়মিতভাবটা এখনো রয়ে গেছে। মাঝে মাঝে খুব কষ্ট লাগে, দূর অতীতে হারিয়ে যাই।

আজ আমার পঞ্চাশতম পোষ্ট। এই পোষ্টে আমি একটি খবর দিচ্ছি। মুক্তব্লগের সার্ভার সমস্যার সময় আমি চতুর্মাত্রিকে ব্লগ করা শুরু করি। এক সময় সেখানে আমরা বারোজন ব্লগার মিলে লিখে ফেলি একটি বারোয়ারি উপন্যাস- “সরলরেখা – বক্ররেখা”। এবারের বই মেলায় এটি মলাটবন্দী হয়েছে। বের হচ্ছে অন্য প্রকাশের ব্যানারে। উপন্যাসটির ২৫ টি অধ্যায়ের মধ্যে ৩ টি অধ্যায় আমার লেখা। এই উপন্যাসটির আমার অংশটুকু আমি আমার প্রথম ব্লগ, প্রথম ভালোবাসা মুক্তব্লগকে উৎসর্গ করছি।

মুক্তব্লগের সবাইকে ধন্যবাদ…

(এই লেখাটা অনেক আগে কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তব্লগে লেখা হয়েছিলো। এখানে সংরক্ষনের জন্য এখন জমা রাখা হলো।)

সবাইকেই অসংখ্য ধন্যবাদ।

আমার ভিতরে যে কষ্ট ছিলো, আপনাদের লেখা পড়ে তা একনিমিষে উড়ে গিয়েছে। আপনাদের মতো আমিও চাই মুক্তব্লগে কোনো হানাহানি, মনোমালিন্য না থাকুক। ব্লগের আমরা সবাই একটি বৃহৎ পরিবারের সদস্যের মতো। মতের অমিল থাকতে পারে, কিন্তু মনের অমিল থাকবে ন।

মুক্তব্লগের মাধ্যমেই আমার ব্লগিং-এর হাতেখড়ি, স্বভাবতই এর প্রতি আমার এক অন্য ধরনের মায়া আছে। কিন্তু ইদানীং আসলেই লগিন করা নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। আমি মনে করি এই দিকটাতে দ্রুত নজর দেওয়া উচিৎ।

আরেকটা কথা, জিল্লুর রহমান ভাইএর প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ বা রাগ নেই, আমি শুধু উনাকে বলতে চেয়েছিলাম শিরোনামে আমাকে এভাবে অপমান করা উচিৎ হয় নি, আমার কোনো কথায় যদি উনি ব্যক্তিগত ভাবে কষ্ট পান, তাহলে আমি দুঃখিত। আমি খুব খুশি হবো, জিল্লুর রহমান ভাই যদি উনার পোস্টের শুধুমাত্র শিরোনামটা বদলে দেন, না বদলালেও আমার কিছু বলার নেই।

এই পুরো অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমি ব্লগের সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

সবাইকে আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ।

একটি প্রতিবাদলিপি

( আমার লেখা ‘এ লজ্জা রাখি কোথায় ?’ আমি মুক্তব্লগে পোস্ট করেছিলাম। সেখানে জনৈক জিল্লুর রহমান আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে একটা পোস্ট লিখেছে। আমার এই লেখা সেটার প্রতিবাদ)

আমাকে নিয়ে আপনার খুব সুন্দর লেখাটি আমার কিছুক্ষন আগে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। আমি জানি না আপনি কি করেন তবে ডাক্তারদের নিয়ে যে আপনি চিন্তা করেছেন জেনে খুব খুশি লাগছে।

সঙ্গত কারণেই আপনার লেখার সাথে আমি একমত হতে পারলাম না। তাই কিছু লিখতে চাচ্ছি। আপনি কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত।

১।দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এদেশের গরীব-দূঃখী মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চালিত হয় সুতরাং গ্রামের মানুষের সেবার প্রতি আপনার মানসিকতা আমাকে অবাক করেছে।
—- আমি আমার লেখার কোথাও বলেছি কি না গ্রামের মানুষদের আমরা সেবা করতে চাই না? যদি আপনি দেখাতে পারেন কোথাও এই কথা আমি লিখেছি, আমি ব্লগিং ছেড়ে দিবো। লেখা সম্পূর্ণ না পড়ে, না বুঝে একটা কথা লিখে দিলেই হলো না। আপনি বলেছেন, “পাঁচ বছর যাদের টাকায় লেখাপড়া শিখবেন এক বছর তাদের সেবা করতে আপনার এত আপত্তি কোথায়?” আপনি যদি কথাটি আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলেন, তাহলেও বলবো আপনি আমার লেখা পড়েন নি। আমি পরিষ্কার ভাবে লিখেছিলাম আমি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম, দেশের গরীব-দূঃখী মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আমি পড়েনি, আমি পড়েছি আমার বাবার কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকায়। জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ সরকার থেকে কোনো টাকা পেতো কি না আমি জানি না, তবে আমার ইন্টার্নীর টাকাও দেশের গরীব-দূঃখী মানুষের কাছ হতে পাই নি, পেয়েছি WHO হতে। বলা উচিৎ নয়, এরপরও বলছি, মেডিকেলে পড়তে আমার প্রায় দশ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, আমার টাকা ফেরত দেওয়া উচিৎ, না কি আমাকে টাকা ফেরত দেওয়া উচিৎ?

২। গ্রামে আপনার শিক্ষাজীবনে শেখাবার ডাক্তার নেই একথাটা পাঠক সাধারনকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন এটা ঠিক না কারণ প্রত্যেক উপজেলা সদরে একজন টি.এইচ.এ এবং কয়েকজন এম.বি.বি.এস ডাক্তার ছাড়াও ইদানিং বিশেষজ্ঞ আছে তাদের কাছে আপনার শেখার অনেক আছে।———- খুবই হাসি পাচ্ছে। বাংলাদেশে গ্রামের কথা বাদ দিলাম, থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কি অবস্থায় আছে সেটা বোধহয় আপনি ছাড়া আর সবাই জানে, অতএব বোকা বানানোর প্রশ্নই আসে না। বরং আপনার লেখা দিয়ে আপনি বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন। আপনি কি জানেন থানা পর্যায়ে কি ঘটে? আপনাকে কিছু নমুনা দিচ্ছি-আমার এক পরিচিত আপুর পোস্টিং হলো কুমিল্লার দেবীদ্বারে।সে প্রথম দিন গিয়ে দেখলো যে সেখানে ব্যবস্থা হচ্ছে রুগী আসলে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কি টিকিটে দেখাবেন না প্রেস্ক্রিপ্সন করাবেন?” টিকিট মানে সরকারী ৩ টাকার টিকিট, আর প্রেসক্রিপশন মানে ১০০/২০০ টাকা দিয়ে দেখানো। নিয়ম অনুসারে সরকারী কোন কমপ্লেক্সে টাকা নেয়া ম্যালপ্রাক্সিস এবং অনৈতিক। আপু বললেন, আমি টাকা ছাড়া রুগী দেখবো, যে কাজে আমি এসেছি। ৬ দিন টিকতে পারলেন, ৭ম দিন টিএইচও(অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পোস্ট) আপুকে ডেকে পাঠালেন। সরাসরি বললেন, আপনি সপ্তাহে ১ দিন আসবেন। আপনার রোজ আসার দরকার নেই। বেতন তোলার দিন বেতন তুলে নিবেন। প্রতিদিন যেন আপনাকে না দেখি।

আরেকজন এরকম টাকা নিতে অস্মকৃতি জানানোয় একদিন গিয়ে দেখেন তার রুমে তালা মারা। টিএইচও বললেন, রুমে তালা মারার অর্থ আপনার বুঝা উচিত।

এদের কাছ হতে শিক্ষানবীশ ডাক্তাররা কি শিখবে? আর এই যে এডহকে ৫০০০ ডাক্তার নিলো, কয়জন ডাক্তার গ্রামে আছে? আমার কথাই ছিলো সেই টা, আমরা সরকারী ডাক্তারদের গ্রামে পাঠাতে পারছি না, এখন চাচ্ছি ইন্টার্নী ডাক্তারদের পাঠাতে। আমার প্রতিবাদ ছিলো এই খানে।

৩। মানবসেবা শব্দটাই আমার কাছে এখন হাস্যকর লাগে-এটা ঠিক বলেছেন সেবা যখন কবরেনই না তখন আর সেবকের কৃতিত্ব নিতে চাইবেন কেন?———- এবার একটু কড়া ভাবেই আমি বলতে চাই আপনার লেখা বোঝার কোনো ক্ষমতাই নেই। মানবসেবা আমি করি কি না সেটা আমিই জানি, আপনি নন। আপনি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন? আমি কি করি সে টা আপনাকে বলতে যাওয়াটা আমার বোকামী হবে, শুধু এটুকু বলতে পারি আপনার বোঝার সামর্থ্য নেই কতটুকু কষ্টে এই কথাটা লিখেছিলাম। আপনার উপরোক্ত কথা দ্বারা আবার বোঝা যাচ্ছে আপনি আমার লেখাই পড়েন নি।

৪। ডাক্তাররা যেন গ্রামের হাসপাতালে গিয়ে ঠিকমতো ডিউটি করে সেজন্য ইন্টর্নী কালীন সময় তাদের হাজিরা ইউ.এন.ও দের হাতে দিয়ে তাদের হাতে যেন কিছু মার্ক দেয়া হয় যাতে ডাক্তাররা স্টেশনে থাকতে বাধ্য হয় তা না হলে ইন্টার্নী ডাক্তাররা যাদের তত্বাবধানে থাকবে তারা স্বজনপ্রীতি করবে। ———— হা হা হা…। আপনি আমাকে বলেছেন আমি উন্নত প্রজাতির প্রাণী (মানুষও নই), আর আপনাকে আমি কি বলবো? আপনি কি ভাই ইউ এন ও? কিছু বাড়তি টাকা কামাতে চাচ্ছেন? আমি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।

৫। ডাক্তাদের পড়াশোনার সময় আরো বৃদ্ধি করে হিউম্যান ডেভলাপম্যাণ্ট ট্রেনিং দেয়া উচিত।
————- হ্যাঁ, এখানে আমি আপনার সাথে একমত। তবে আপনার লেখার টোনটা ছিল ব্যাঙ্গাত্নক এবং আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।

৬। ডাক্তারদের উপস্থিতি এবং জনসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক উপজেলায় স্থানীয় সরকার কিংবা ইউ.এন.ওদের সমন্বয়ে কমিটি করা উচিত যাতে তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করে (সেবা না দায়িত্ব)।
————— আমি আবারও বলবো আপনি আমার লেখা পড়েননি। আমার লেখার বিষয়বস্তু ছিলো ইন্টার্নী ডাক্তারদের গ্রামে এক বছর ইন্টার্নী করা নিয়ে, ডাক্তারদের ব্যাপারে আমি কিছুই বলি নি। আপনার কথা পুরোপুরি অপ্রাসংগিক।

৭। ডাক্তাররা নিরীহ মানুষদের অযথা অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করে যেন ডায়গোনিস্টিক সেণ্টার থেকে কমিশন না নিতে পারে সেজন্য তদারকি করা দরকার। —————- আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।

৮। অপারেশনে কোন রোগী মারা গেলে তার সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যাসহ তার গাফিলতির জন্য রোগী মারা গেলে তার শাস্তির বিধান থাকা উচিত।—————-আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।

৯। যে কোন সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক কোন মামলা করতে গেলে যে সরকারের অনুমতি দরকার এটা ডাক্তারদের বেলায় প্রযোজ্য করা ঠিক হবে না।—————আমার পোষ্টের বিষয়বস্তু থেকে আলাদা/অপ্রাসংগিক।

আপনি আপনার কোনো অভিমত থাকলে আপনি সে টা বলতেই পারেন, কিন্তু আপনি আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমন করে পোষ্টের শিরোনাম দিয়েছেন, যে টা ভদ্রতার কোনো সীমারেখার মধ্যেই পরে না। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং আপনারও নেওয়া উচিৎ।

সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই, কোনো লেখা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে লেখাটা পুরোপুরি পড়ে, এর অর্থ বুঝে তারপরে কলম ধরুন, তার আগে নয়।

আমি সাধারণত কখনোই এভাবে আক্রমনাত্নক লেখা লিখি না, এবার লিখলাম, আপনার লেখাটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে বলে। ভালো থাকুন অবিরত।

প্রসংঙ্গঃ ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী, আওয়ামী পৃথিবী

(বিভিন্ন ব্লগে ওয়াচডগের লেখা-ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী, আওয়ামী পৃথিবী এর প্রতিক্রিয়ায় লেখা)

আমি রাজনীতি খুব একটা বুঝিনা, তাই রাজনীতি বিষয়ে কিছু লিখিও না। তবে এ সংক্রান্ত লেখা আমি পড়তে ভালোবাসি। যায় যায় দিন পত্রিকায় এক ওয়াচডগের লেখা পড়তাম (যদি স্মরনশক্তি আমার সাথে প্রতারনা না করে)। আমি তাকে চিনতাম না, জানতাম না, তার সব কথার সাথে এ্কমত হতাম না, আবার কিছু কিছু কথা ফেলতেও পারতাম না, কিন্তু কোনো মন্তব্য করার সুযোগ ছিল না। আমি জানিনা এই ওয়াচডগ আর সেই ওয়াচডগ একই ব্যক্তি কিনা । কিন্তু এখানে যখন সুযোগ পেয়েছি, কিছু লিখতে চাচ্ছি। প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি পোষ্টের জন্য। আর আমার কোনো কথা যদি আপনাকে কষ্ট দেয়, আমি আগেই আপনার কাছ হতে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।

আপনি প্রথমেই লিখেছেন “একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের সীমানা হতে বাংলাদেশ নামক দেশটার অবস্থান কতটা দূরে তা মাপতে বোধহয় যন্ত্রপাতির দরকার হবেনা। চোখ কান খোলা রেখে ৩৬০ ডিগ্রী পরিধিতে তাকালে এর দূরত্ব ও নৈকট্য দুটোই অনুভব করা যাবে”– আমি ঠিক জানি না ব্যর্থ রাষ্ট্র বলতে আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন? আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র নই, মানুষের মাথায় ছুরি কাচি চালাই । তাই জানিনা বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র কিনা, শুধু এ টুকু জানি Bangladesh didn’t loss of physical control of its territory, He has a legitimate authority to make collective decisions, able to provide reasonable public services, and able to interact with other states as a full member of the international community. আমরা কেন জানি না সব সময় কথা বার্তায় নিজের দেশ কে খাটো করতে চাই। আপনি কিছু খুন খারাপী, লঞ্চ ডুবিতে মানুষ মৃত্যু ইত্যাদি আরো উদাহরণ দিয়েছেন, আমিও চাই এসব যাতে না ঘটে কিন্তু এগুলো তো সেই আমাদের অতি আকাঙ্খিত গণতন্ত্রের (১৯৯১ সাল)পর থেকেই হয়ে আসছে- এতে আওয়ামী পৃথিবী ছোট হবে কেনো বুঝতে পারলাম না।

আপনি লিখেছেন ‘যে শান্তিচুক্তির জন্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথা সে ’শান্তির’ রাজ্যই এখন মৃতপুরী। এখানেও লাশ পরছে, পাশাপাশি রাজত্ব করছে ভয়, ভীতি আর সন্ত্রাস নামক নোবেলিয় বিভীষিকা” ।অনেক আগেই শান্তিচুক্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন ইয়াসির আরাফাত, শিমন পেরেজ আর আইজ্যাক রবিন, কিন্তু ফিলিস্তিনের কি অবস্থা এখন? সেখানেও লাশ পরছে, পাশাপাশি রাজত্ব করছে ভয়, ভীতি আর সন্ত্রাস নামক নোবেলিয় বিভীষিকা।

আপনি লিখেছেন “দুদিন আগে সরকার প্রধান সদম্ভে ঘোষনা দিলেন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার। তিন দিকে ভারত আর একদিকে বঙ্গোপসাগরের বিশাল ঢেউ ডিঙ্গিয়ে তৃতীয় কোন দেশ অথবা শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্ন করতে আসবে কিনা তা সরকার প্রধানই বলতে পারবেন”। শেখ হাসিনা কি করবেন বলুন তো, আমি তো জন্ম থেকেই অন্য পক্ষ থেকে শুনে আসছি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে । তাই হয়তো উনি ভারতকেই লক্ষ্য করে কথাটা বলেছেন, আর আপনি হয়তোবা ভুল বুঝেছেন। ওয়াচডগ ভাইয়া, ভুল আমিও বুঝতে পারি, Please আমার কথায় কিছু মনে করবেন না।

আপনার লেখায় ডঃ ইউনুসের প্রসংগ এসেছে, সময় পেলে আমার এই প্রসংগে লেখার ইচ্ছা আছে। আমি এখানে শুধু বলতে চাই ডঃ ইউনুস নোবেল এনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্ব্ল করেছেন, তাই বলে উনি যদি কোনো ভুল করেন বা অন্যায় করেন সেটার কি কোনো সংশোধন বা বিচার করা যাবেনা ( আমি কিন্তু বলছি না উনি ভুল বা কোনো অন্যায় করেছেন কিনা)? আমরা ডঃ ইউনুসকে দেবতা বানিয়ে ফেলেছি। হযরত উমরের রাজ্যজয়ে খালিদ বিন ওয়ালিদের বিশাল ভুমিকা ছিল, উমর কিন্তু দোষ খুঁজে পেয়ে ঠিকই খালিদ কে পদচ্যুত করেছিলেন এবং আরব জাহান সে টা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়েছিলো। ডঃ ইউনুসের ব্যাপারে আমেরিকা সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে। আমার খুব লজ্জা লাগে যখন দেখি কিছু লোক এটাকে সমর্থন দিচ্ছে, আমার মনে হয় তারা চাচ্ছে তাদের দেশের সরকার অন্যায় চাপের কাছে মাথানত করুক।

আমিনীর ব্যাপারে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই, শুধু এটুকু বলতে পারি তাকে কথা না বলতে দিলে আবার এই আমরাই বলবো দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র নেই।

ওয়াচডগ ভাইয়া, আমি রাজনীতি করিনা। কিন্তু যখন দেখি অযথা সমালোচনা করা হয় তখন কষ্ট লাগে ।আমরা কেনো জানি না গঠনমূলক সমালোচনা করতেই জানিনা। বর্তমান সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুল আছে, সেগুলি নিয়ে হরতাল ডাকিনা, আন্দোলন করিনা , সমালোচনা লিখিনা।আমরা হরতাল ডাকি বাড়ি নিয়ে, হরতাল ডাকি ছেলের মামলা নিয়ে, হরতাল ডাকি নারী নীতি আর শিক্ষা নীতি যেখানে ইসলাম বিরোধী কিছু নেই তা নিয়ে। অথচ যখন সপ্তাহের বেশীরভাগ দিন ডাক্তার রা কর্মক্ষেত্রে থাকে না, তা নিয়ে আন্দোলন করিনা, ইভ টিজিং-এর কারণে যখন কেউ মারা যায় তখন আন্দোলন করিনা, সরকারী অফিসে কোনো কাজে যখন ঘুষ চাওয়া হয় তখন আন্দোলন করিনা, শেয়ার বাজারের কালপ্রিট রা যখন ধরা-ছোয়ার বাইরে চলে যায় তখন আন্দোলন করিনা, সিএনজি চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে আন্দোলন করিনা, ঢাকা শহরের অসহনীয় যান জট নিয়ে আন্দোলন করিনা, অবৈ্ধ বিজেএমইএ ভবন নিয়ে আন্দোলন করিনা, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি আবারো ওয়াচডগ ভাইয়া, আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি আমার কোনো লেখায় আপনি কষ্ট পেয়ে থাকেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।