গ্রীক মিথলজি ৯ (এথেনার গল্পকথা- প্রথম পর্ব)

(১)

মিথ অনুযায়ী এথেনার জন্ম হয় ট্রিটন নদীর তীরে। এই ট্রিটন একজন নদী দেবতা। তারো এক মেয়ে ছিলো, নাম পালাস। পালাস এবং এথেনা একসাথেই খেলাধূলা করতেন, বিশেষ করে যুদ্ধের বিভিন্ন কলা- কৌশল রপ্ত করতেন। একদিন এক বিষয় নিয়ে দুই বান্ধবীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয় এবং পালাস এথেনাকে আক্রমন করতে উদ্যত হয়। জিউস সবকিছু দেখছিলেন। তার প্রিয় সন্তানের এই অবস্থায় তিনি তার দুর্ভেদ্য ঢাল দিয়ে এথেনাকে রক্ষা করেন। ঘটনার আকস্মিতায় পালাস চমকে উঠে। এই সুযোগে এথেনা পালাসকে আঘাত করেন এবং আহত করে হত্যা করেন। যখন পালাস মারা যায়, এথেনা বুঝতে পারেন কী সর্বনাশা কাজ তিনি করেছেন। প্রচন্ড রকম অনুতপ্ত হোন। পালাসের একটি কাঠের মূর্তি বানিয়ে সেটিকে তিনি নিজের ঢালে প্রতিস্থাপন করেন। জিউস তখন সেটিকে পৃথিবীর দিকে নিক্ষেপ করলে, ঢালটি ট্রয়ের কোনো এক অংশে পতিত হয়, তখন থেকেই এথেনা জিউসের ঢাল ব্যবহার করতেন। একমাত্র এথেনারই এই অধিকার ছিলো। পালাসকে স্মরণ করার জন্য এথেনা নিজের নামের আগে পালাস শব্দ ব্যবহার করলে, এথেনার পুরো নাম হয় পালাস এথেনা।

(২)

বলা হয়ে থাকে এথেনা বাঁশি, ভেঁপু, পোড়ামাটির বাসনপত্র, লাঙ্গল, মই, ষাঁড়ের জোয়াল, ঘোড়ার লাগাম, রথ, জলযান- এই জিনিসগুলি আবিষ্কার করেছেন। আরো বলা হয়ে থাকে মেয়েদের বিভিন্ন কলা –কৌশল, যেমন রান্না করা, বয়ন করা, চরকা কাটা ইত্যাদি জিনিস এথেনাই শিখিয়েছেন।

উত্তর গ্রীসের ছোট্ট একটি শহর লিডিয়া। সেখানে বাস করতেন এক সুন্দরী মানবী, এরাকনি। এরাকনি নাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিলো তার সৌন্দর্য্যের জন্য নয়, তার বয়ন এবং তাঁতের কাজের জন্য। সে এতো সুন্দর করে কাপড় বুনতো এবং সেলাইয়ের কাজ করতো, সেটা দেখার জন্য নিম্ফরা পর্যন্ত তাদের ঝর্না ছেড়ে এরাকনির বাড়িতে বসে থাকতো।

Erachni

শিল্পীর তুলিতে এরাকনি বয়ন করছেন

 

তারা দেখতো, এরাকনি পশম সংগ্রহ করছেন এর কঠিন অবস্থা থেকে, এবং সেখান থেকে রোলে পরিণত করতেন। এরপর তার নখ দিয়ে একে যতক্ষন না পর্যন্ত মেঘের মতো নরম এবং হালকা হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত পেজঁ করতেন। সুতাকাটার টাকুকে পাকাতেন দক্ষ হাতে অথবা নকশা বুনতেন এবং নকশা বোনার পর সুচ-সুতা দিয়ে আরো সুশোভিত করতেন। নিম্ফের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, “এরাকনি নিশ্চয়ই এই কাজ দেবী এথেনার কাছ থেকেই শিখেছেন!”

এরাকনি কথাটা শুনলেন, কিন্তু ইতোমধ্যে অহংকারী হয়ে উঠা এরাকনি নিম্ফের কথাটা অস্বীকার করলেন। উদ্ধত কন্ঠে বলে উঠলেন, “এথেনা পারলে আমার মতো কাজ করে দেখাক। যদি সে আমাকে পরাজিত করে, তাহলে আমি যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নিবো”।

এথেনা এই কথা শুনলেন। তিনি খুব হতাশ হলেন। এক বৃদ্ধা মহিলার ছদ্মবেশে এরাকনির বাড়িতে এসে তাকে বললেন, “আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং আশা করি তুমি আমার উপদেশ শুনবে। তুমি তোমার কাজ নিয়ে পৃথিবীর যে কোনো মানবীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারো, কিন্তু কখনো একজন দেবীর সাথে করো না। বরঞ্চ, তুমি এথেনার কাছে তোমার কথার জন্য ক্ষমা চাও, তিনি অতি দয়ালু, নিশ্চয়ই তোমাকে ক্ষমা করবেন”।

এরাকনি তখন বয়ন করছিলেন। তিনি বয়ন করা থামিয়ে দিয়ে খুব রাগান্বিত হয়ে বৃদ্ধা মহিলার দিকে তাকালেন, “তোমার উপদেশ তোমার কাছেই রাখো, খুব বেশি হলে তোমার মেয়েদেরকে দিও। আমাকে কোনো উপদেশ দেবার দরকার নেই। আমি যা বলি, তার জন্য লড়তে প্রস্তুত আছি। এমনকি এর জন্য আমি এথেনাকেও ভয় পাই না। সে যদি খুব বড় বয়নকারীই হয়, তাহলে তাকে আমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে বলো!”

“তিনি এসে গেছেন”, এই কথা বলেই এথেনা তার ছদ্মবেশ খুলে ফেললেন। সেখানে উপস্থিত সকল নিম্ফরা সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে বসে সম্মান জানালেন এবং অন্যান্য মানব-মানবীরাও যথাযথভাবে এথেনাকে সম্মান দিলেন, একমাত্র এরাকনিই ভয়হীনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি অবশ্য এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় লজ্জায় পড়ে গেলেন, কিন্তু তার কথা থেকে একচুলও নড়লেন না! এথেনা আর দেরীও করলেন না, কোনো উপদেশও দিলেন না। তারা দুইজনই প্রতিযোগিতার জন্য তৈরী হতে লাগলেন।

তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান নিলেন এবং কড়িকাঠের সাথে বয়ন করার সুতা সংযুক্ত করলেন। এরপর তারা কাপড় বোনার লিকলিকে মাকুকে সুতার বাইরে এবং ভিতর দিয়ে আনা-নেওয়া করতে লাগলেন। প্রত্যেকেই খুব দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে কাজ করতে লাগলেন। এরাকনি তার বোনার মধ্যে জিউসের সাথে লেডা, আর ইউরোপার পরকীয়া ফুটিয়ে তুলতে লাগলেন, আরো ফুটিয়ে তুললেন অন্যান্য দেবতাদের মরণশীলদের সাথে পরকীয়ার কাহিনী। অন্যদিকে, এথেনা দেবতাদের প্রশস্তিগাঁথা বানাতে লাগলেন, ফুটিয়ে তুললেন পসাইডনের সাথে এটিকা নিয়ে যুদ্ধের কাহিনী।

সবাই যখন এরাকনির কাজ দেখলো, মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। এতো সুন্দর! এতো অদ্ভুত! তারা ভাবলো, এমনকি দেবী এথেনাও এতো সুন্দর নকশা বানাতে পারবেন না। কিন্তু তারা যখন এথেনার কাজের দিকে তাকালেন, তাদের আর কিছুই বলার ছিলো না। এতো সুন্দর কাজ পৃথিবীর কারো পক্ষে কখনো সম্ভব নয় বলে একবাক্যে সবাই রায় দিলেন। কিন্তু এই পরাজয় এরাকনি মানতে পারলেন না। অন্যদিকে এরাকনির কাজে দেবতা জিউসকে অপমান করা হয়েছে, এই চিন্তা করে এথেনা রাগান্বিত হয়ে এরাকনিকে আঘাত করলেন, তার বুনন যন্ত্র, তাঁত সবকিছুই ধ্বংস করে দিলেন এবং সবশেষে এরাকনিকে মাকড়সায় পরিণত করলেন এবং সেই থেকে মাকড়সা শুধুই জাল বুনে যাচ্ছে এবং সবাইকে এরাকনির নির্বুদ্ধিতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ বলে থাকেন, এরাকনি হতাশায় আত্মহত্যা করেছিলেন। তখন এথেনা তাকে জীবিত করে মাকড়সায় পরিণত করেছিলেন।

Athena attacked Erachni

রেনে এন্তনিয়োও ১৭০৬ সালে আঁকা ‘এথেনা এরাকনিকে আঘাত করছে’

Athena turns Erachni into spider

এথেনা এরাকনিকে মাকড়সাতে পরিণত করলেন

 

(৩)

গ্রীসে তখন সবে মাত্র এথেন্স নগরীর পত্তন হলো। নগরীর নামও তখন এথেন্স নয়। এর প্রথম রাজা হলেন সেক্রোপস। সেক্রোপস ছিলেন অদ্ভুত ধরনের রাজা, কারণ তিনি অর্ধেক ছিলেন মানব এবং অর্ধেক ছিলেন সাপ। তিনি তার শহরের সুরক্ষার জন্য একজন পৃষ্ঠপোষক দেবতা চাইলেন। শহরটির পৃষ্ঠপোষক হবার জন্য সমুদ্র দেব পসাইডন এবং এথেনা – দুইজনই খুব আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তারা দুইজনই এতোটা উদগ্রীব ছিলেন যে, মনে হচ্ছিলো এখনই দুইজনের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাবে। অবশেষে সেক্রোপস অনুরোধ করলেন, দুইজনকে শহরের অধিবাসীদের উপহার দিতে। যার উপহার শহরের জন্য বেশী কাজে লাগবে, তারই উপাসনা করবে শহরবাসী, তাকেই বানাবে শহরের পৃষ্ঠপোষক।

লোকারন্য অবস্থায় পসাইডন এবং এথেনা গেলেন এক্রোপলিসে। প্রথমে পসাইডন এগিয়ে এলেন। তিনি তার হাতের ত্রিশূল দিয়ে সজোরে ভূমিতে আঘাত করলেন। সেখান থেকে তৈরী হলো এক ঝর্না। শহরের অধিবাসীরা সবাই খুব চমকে উঠলো। তারা খুব খুশিও হলো। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। তারা ঝর্নার পানির স্বাদ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখে তা লবণাক্ত, পানের অযোগ্য।

Athena and Poseidon

শিল্পীর তুলিতে- এথেনা এবং পসাইডন এথেন্স শহরের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন

 

এরপর এগিয়ে এলেন এথেনা। তার কাজটা অতোটা নাটকীয় হলো না! তিনি হাঁটু গেড়ে বসে জমিতে কি যেনো বপন করলেন এবং সেখান থেকে উৎপন্ন হলো অলিভ গাছ। এই গাছ থেকে ল্যাম্প জ্বালানোর তেলের উৎস পেলো তারা, পেলো রান্না করার জিনিস, এমনকি এই গাছের কাঠ দিয়ে তারা বাড়ি বানাতে পারলো। তাই শহরবাসী এথেনার উপহারেই খুশি হলো এবং সেক্রোপস এথেনাকেই তাদের পৃষ্ঠপোষক বানালেন এবং শহরের নাম রাখলেন দেবীর নাম অনুযায়ী এথেন্স। সেই থেকে এথেনা এথেন্সকে বিভিন্নভাবে রক্ষা করে আসছেন, এই কারণেই এথেনা ট্রোজান যুদ্ধে এথেন্সকে সাহায্য করেছিলেন।

পসাইডন অবশ্য এই পরাজয় সহজে মেনে নিতে পারেন নি। তিনি এথেন্সবাসীকে অভিশাপ দিলেন, এথেন্সে পানি সহজে পাওয়া যাবে না। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এথেন্সে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাব দেখা যায়।

(৪)

হেফাস্টাস ছিলেন কামার দেবতা। তার স্ত্রী ছিলেন সুন্দরের দেবী আফ্রোদিতি। একবার কোনো এক কারণে আফ্রোদিতির সাথে ঝগড়া করে হেফাস্টাস আলাদাভাবে বসবাস করতে লাগলেন। ঠিক সেই সময়ে এক সুন্দর সকালে এথেনা এলেন হেফাস্টাসের কাছে- কিছু অস্ত্র বানাবার জন্য।

যখনই এথেনা হেফাস্টাসের কারখানায় প্রবেশ করলেন, তখন থেকেই এথেনার প্রতি হেফাস্টাস এক প্রবল আসক্তি অনুভব করলেন। হেফাস্টাস আশা করলেন অস্ত্র তৈরী করে দেওয়ার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এথেনা তাকে ভালোবাসা দিবেন। কিন্তু এথেনা ছিলেন কুমারী এবং তিনি কুমারী থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছলেন। তাই তিনি হেফাস্টাসের আহবানে সাড়া দিলেন না। হেফাস্টাস কোনো করুণা দেখাতে চাইলেন না, তিনি জোর করে এথেনার শ্লীলতাহানি করতে চাইলেন। ধস্তাধস্তির জন্য সেটা সম্ভব হলো না, কিন্তু হেফাস্টাসের বীর্য স্খলন হয়ে এথেনার ঊরুতে পরে গেলো।

Athena and Hephastus

হেফাস্টাস এথেনার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছেন

 

লজ্জায় এবং ঘৃনায় এক টুকরো পশম দিয়ে এথেনা সেই বীর্যটিকে দূরে নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু উর্বর গায়া এই বীর্য গ্রহন করে অর্ধেক সাপ এবং অর্ধেক মানুষের মতো এক অদ্ভুত বাচ্চার জন্ম দিলেন। বাচ্চার নাম দেওয়া হয়েছিলো এরিকথোনিয়াস।

Ericthonius

শিল্পীর তুলিতে এরিকথোনিয়াস

 

এথেনা তখন এরিকথোনিয়াসকে একটা ঝুড়ির মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন এবং দুইটি সাপকে পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করলেন। তিনি ঝুড়িটিকে পাঠিয়ে দিলেন এথেন্সে, রাজা সেক্রোপসের তিন মেয়ে হেরসে, প্যান্ড্রোসাস এবং এগলাওলাসের কাছে এবং তাদেরকে ঝুড়িটির ঢাকনা খুলতে নিষেধ করলেন।

একদিন তিনি এথেন্সের এক্রোপলিসকে সাজানোর জন্য একটা পাহাড় আনতে অন্য জায়গায় গিয়েছিলেন, তখন সেই তিন বোন নিষেধ অমান্য করে ঝুড়িটির ঢাকনা খুলে ফেলেন। তারা ঢাকনা খুলে এই অদ্ভুত বাচ্চা (যদিও তাদের বাবা সেক্রোপসও অর্ধেক মানব, অর্ধেক সাপ) দেখে ভয় পেয়ে এক্রোপলিসের দিকে দৌড়ে যান এবং এক্রোপলিসের প্রান্ত থেকে নিচে পড়ে গিয়ে তিন বোনই মারা যান।

তিন বোন ঝুড়িটির ঢাকনা খুলে এরিকথোনিয়াসকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন

তিন বোন ঝুড়িটির ঢাকনা খুলে এরিকথোনিয়াসকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন

 

একটি সাদা র‍্যাভেন পাখি সংবাদটি যখন এথেনাকে জানায়, হতাশায় ক্ষুদ্ধ হয়ে এথেনা সাদা পাখিটিকে কালো করে দেন এবং যে পাহাড়টি এক্রোপলিসের জন্য বয়ে আনছিলেন, সেটা নিচের দিকে ছুড়ে মারেন এবং তা এথেন্সের মধ্যখানে গিয়ে পড়ে। এটাই হচ্ছে বর্তমানের খুব সুন্দর মনোরম পাহাড় লাইকাবেট্টাস, যা এথেন্স শহরের মধ্যখানে অবস্থিত।

এথেন্সের লাইকাবেট্টাস পাহাড়

এথেন্সের লাইকাবেট্টাস পাহাড়

 

কোনো কোনো মিথে আছে তিন বোনের মধ্যে প্যান্ড্রোসাস ঢাকনা খোলার সময় ছিলেন না এবং বাকী দুই বোন মারা যান। র‍্যাভেন পাখির জায়গায় কেউ কেউ কাকের কথা বলেন।

পরবর্তীতে এথেনার সাহায্যে এরিকথোনিয়াস এথেন্সের রাজা হোন। তিনি জনগনের ভালোর জন্যই কাজ করতেন। মিথ থেকে জানা যায়, তিনিই প্রথম ঘোড়ার সাথে চ্যারিয়ট সংযুক্ত করেছিলেন, লাঙ্গলের সাহায্যে ভূমি কর্ষন করেছেন এবং তিনিই প্রথম মানুষকে রুপার ব্যবহার শিখিয়েছেন, যখন সোনার চেয়ে রুপা ছিলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। (টেকনিক্যালি, এরিকথোনিয়াসকে বলা হয়ে থাকে হেফাস্টাস এবং গায়ার সন্তান।)

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s