যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

(১)

বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়ানো নবনীতার মনের ভিতরেও বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো সে বৃষ্টিতে দু’চোখের পাতাও ভিজে যাচ্ছে। সিডিতে খুব প্রিয় একজন মানুষের গাওয়া একটা খুব প্রিয় গান শুনছে নবনীতা, ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইবো না, আমি বাইবো না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে’, শুনতে শুনতে নবনীতা ফুঁপিয়ে উঠলো, দৃষ্টি আবার ঝাপসা হয়ে এলো। মা রান্নাঘর থেকে ডাক দিলে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বললো, ‘আসছি’।

(২)

চারদিন আগে।

পাবলিক লাইব্রেরির সামনে বসে বার বার হাতের ঘড়ি দেখছে নবনীতা, ‘সুমনটা এতো দেরী করে সবসময়’ বিড়বিড় করে বিরক্তিটা প্রকাশ করছে। সুমন। নবনীতার সাথে পরিচয় বছর পাঁচেক আগে। একটি বেসরকারী টেলিভিশন আয়োজিত প্রতিভা অন্বেষন প্রতিযোগিতার অডিশন দিতে গিয়ে নবনীতা দেখলো চশমা পরা লাজুক এই ছেলেটিকে। নবনীতাই যেচে গিয়ে আলাপ করে সুমনের সাথে। সহজ মনের কথাবার্তায় প্রাঞ্জল সুমনকে প্রথম দিনেই ভালো লেগে যায় নবনীতার। নবনীতা অডিশনেই আটকে যায়, সুমন পৌঁছে যায় মূল প্রতিযোগিতার সেরা পাঁচে। এরপরও সুমনের সাথে নবনীতার ভালোবাসার সম্পর্ক হওয়াটা আটকায়নি।

পুরো আধা ঘন্টা দেরী করে এসে সলাজ হাসি দিয়ে দুই হাত দিয়ে কান ধরে নবনীতার সামনে এসে দাঁড়ালো সুমন। এইসব কারণেই নবনীতা কখনো সুমনের উপর রাগ করে থাকতে পারে না, হাল ছেঁড়ে দিয়ে বললো, ‘আর কতোদিন এভাবে দেরী করে আসবে?’ ‘যতদিন তুমি আমার জন্য এখানে বসে অপেক্ষা করবে’, সুমনের ত্বরিত জবাব। এরপর দু’জনের খুনসুটি শুরু।

‘কাল বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার যাচ্ছি। দুই দিন পর আসবো, এই দুই দিন তোমাকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না’ সুমনের কথাটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিলো না নবনীতা। এমনিতেই সুমনের সাথে সপ্তাহে এক বা দুই দিনের বেশী দেখা হয় না। এখানে সেখানে প্রোগ্রাম, গান রেকর্ডিং নিয়ে সুমনকে প্রায় সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয়। সে তুলনায় দুই দিন কোনো ব্যাপারই নয় নবনীতার জন্য।
-‘আমার জন্য কি নিয়ে আসবে?’
-‘কেনো? আমি আসলে হবে না? অন্য কিছু আনতে হবে?’

নবনীতা উত্তর দেয় না, আনমনে ভাবে সুমন কবে আসবে ওর কাছে একেবারে সবসময়ের জন্য?

সুমন বেশীরভাগ সময় রবীন্দ্র সঙ্গী্ত গায়, মাঝে মাঝে কিছু আধুনিক গানও যখন গায়, শুনতে খারাপ লাগে না। তবে নবনীতার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে সুমনের গাওয়া এই ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ রবীন্দ্র সঙ্গী্তটি। সময় পেলেই এই গানটা নবনীতা শুনে। সুমন ওকে মজা করে বলে, ‘আরে, এই গানতো আমি মরে গেলে শুনবে, এখন না!’

(৩)

গতকাল সন্ধ্যায় সবগুলো টিভি চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ ছিলো, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে গিয়ে তরুন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সুমন চৌধুরী মারা গিয়েছেন’।

( কিছু একটা লিখতে চেয়েছিলাম, কি লিখেছি নিজেও বুঝতে পারছি না, কিভাবে লিখেছি তাও বুঝতে পারছি না, শুধু জানি লিখতে গিয়ে বার বার আবিদের কথাই মনে পড়ছিলো)

4 thoughts on “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

  1. জামিলা আপু, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার ব্লগে আসার জন্য। আসলেই এমনভাবে চলে যাওয়া মন মেনে নিতে চায়না, তারপরও মেনে নিতে হয়। খুব ভালো থাকুন আপনি।

  2. এমন ভাবে চলে যাওয়া মন মেনে নিতে চায়না। ভালো লিখেছেন ডাক্তার।

Leave a reply to ডাঃ এস এম নিয়াজ মাওলা Cancel reply